বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে জামায়াতে ইসলামী সমমনা দলগুলোকে নিয়ে ‘নির্বাচনী জোট’ গঠনের পরিকল্পনা বাতিল করে আসনভিত্তিক সমঝোতার ঘোষণা দিয়েছে। রাজনৈতিক মহলে এই সিদ্ধান্ত নতুন আলোচনা ও জল্পনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি কোনো ‘গোপন’ বা কৌশলগত পদক্ষেপ?
দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আমাদের কোনো জোটের কাঠামো নেই। আমরা শুধু নিশ্চিত করছি, প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী না থাকে। আমাদের পরিকল্পনায় গোপন কোনো বিষয় নেই। অর্থাৎ, জামায়াত স্বতন্ত্র সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বসে ভোট ভাগাভাগি নিশ্চিত করছে, তবে আনুষ্ঠানিক জোটের পথে যাচ্ছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসনভিত্তিক সমঝোতা জোটের তুলনায় অনেক বেশি নমনীয়। দৈনিক নয়াদিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলছেন, জোটে নির্বাচন শেষ হলেও পরে নানা বিষয়ে সমঝোতা করতে হয়। জামায়াতসহ ইসলামপন্থি দলগুলো তাই ভোট ভাগাভাগি নিশ্চিত করতে আসনভিত্তিক সমঝোতাকেই কৌশল হিসেবে নিচ্ছে। এতে সবার অবস্থান শক্ত থাকে, আবার নির্বাচনও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
জামায়াতের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক বাস্তবতাও কাজ করছে। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের সদস্য হিসেবে তারা ক্ষমতায় এসেছিল। তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিএনপি-জামায়াতের দূরত্ব বাড়ার পর থেকে দলটি স্বাধীন অবস্থান বজায় রেখেছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই স্থানীয়ভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা শুরু করলেও এখন সমমনাদের সঙ্গে আসনভিত্তিক সমঝোতা নিশ্চিত হওয়ার পর কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
সমমনাদের মধ্যে অন্যতম বড় দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান বলছেন, নির্বাচনের জন্য আমরা কোনো জোট গঠন করিনি, বরং প্রতিটি আসনে সমঝোতার মাধ্যমে একাধিক প্রার্থী না হওয়ার ব্যবস্থা করেছি। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরও জানান, ভোট ভাগাভাগির লক্ষ্যেই এই সমঝোতার উদ্যোগ।
দলটির এই কৌশলকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। বিএনপি ইতিমধ্যেই সমমনাদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসন রেখেছে এবং জামায়াতও একই পথে এগোচ্ছে। এতে শুধু নিজেদের শক্তি নয়, নির্বাচনের বৈচিত্র্যও বজায় রাখার চেষ্টা করছে দলটি।
২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতসহ অনেক দল অংশগ্রহণ করেনি। ২০১৮ সালে জামায়াতের ২২ জন প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়েছেন। ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এবার আসনভিত্তিক সমঝোতার মাধ্যমে দলটি স্বতন্ত্র হলেও সমমনাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাইছে।

