দেশী-বিদেশী ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিত ‘সাজেক ভ্যালী’। এটি রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের অবস্থিত। সাজেকের নাম শুনেনি এমন ভ্রমণ পিপাসু পর্যটক পাওয়া দুষ্কর। সবুজ পাহাড় চূড়ায় মেঘের লুকোচুরি পর্যটকদের মনে একরাশ প্রশান্তি আনে। তাই প্রতি বছর হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটে মেঘের রাজ্য খ্যাত সাজেক ভ্যালিতে।
সাজেকে আগত অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলিম বেড়াতে এসে নামাজ আদায় করতে না পেরে চরম বিড়ম্বনায় পড়ে। তাই পর্যটকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো সাজেকে একটি মসজিদ নির্মাণ করা। ধর্মপ্রাণ মুসলিম পর্যটকদের কথা মাথা রেখে সাজেকে মসজিদ নির্মাণে যৌথভাবে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
বর্তমানে মসজিদটির সৌন্দর্য দেখে প্রতিনিয়ত বিমোহিত হচ্ছে সাজেকে আগত হাজারো বিভিন্ন ধর্মের পর্যটক। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নামাজের সময় নামাজ আদায় করলেও অন্য ধর্মের পর্যটকগণ এখানে ভিড় করে মসজিদটির সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য। নিজেদের মুঠোফোনে ছবি, সেলফি তুলে স্মৃতি ধারণ করে রাখছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি পুরো পাহাড় চূড়ায় প্রশান্তির ছোঁয়ায় আচ্ছন্ন করে রাখে। মসজিদটি এখনো সম্প্রীতির মিল বন্ধন হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
সাজেকে আগত পর্যটক আব্দুল কাদের বলেন, আমরা রংপুর থেকে বেড়াতে এসেছি। পাহাড় চূড়ায় এত সুন্দর মসজিদ দেখে মনে প্রশান্তির ছোঁয়া লেগেছে। মসজিদের স্থাপত্যশৈলী দেখে আমি মুগ্ধ। প্রথমে সাজেকে পৌঁছে এ মসজিদে এসে জোহরের নামাজ আদায় করেছি। কয়েকদিন সাজেকে থাকবো, নামাজ পড়তে সমস্যা হবে না।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আনিস মাহমুদ বলেন, আগে সাজেকে আসলে হোটেলে নামাজ আদায় করতে হতো। বেশ কয়েক বছর আগে এখানে জুমা মসজিদ নির্মিত হওয়ার পর এখন জুমার নামাজ আদায় করতে পারছি। একজন মুসলিম হিসেবে আমার খুব ভাল লাগছে। মসজিদের সৌন্দর্য আমার মনকে পুলকিত করেছে।
খোঁজ নিজে জানা গেছে, ২০২০সালের ০২ ফেব্রুয়ারি সাজেকের রুইলুইপাড়ায় হ্যালিপ্যাডের পাশে মসজিদটির ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেছিলেন, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক চট্টগ্রাম ডিভিশনের তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। মসজিদটি নামকরণ করা হয়েছিলো- ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’।
সমুদ্র পৃষ্ট থেকে এক হাজার ৭শ’ ফুট উঁচুতে পাহাড় চূড়ার এক একর জায়গার উপর এ মসজিদটি অবস্থান। মসজিদটির নির্মাণ ব্যয় হয়েছিলো তিন কোটি ৮৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৮ টাকা। পাঁচ হাজার ২৬৫বর্গফুট আয়তনের মসজিদটিতে রয়েছে চারটি গম্বুজ এবং একটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদটির পূর্ব-পশ্চিমের দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট এবং উত্তর-দক্ষিণের প্রস্থ ৮১ ফুট। মসজিদটি চারতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিলো। নান্দনিক ও অপরূপ স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদটি তৈরি করতে প্রায় দুই বছর সময় লেগেছিলো। সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোনের অধীনে বর্তমানে মসজিদটি সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
দারুস সালাম জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ জহির বলেন, এই মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে আযান দেওয়া হয় এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাদ জামাতে আদায় করা হয়। এছাড়াও এটি জুমা মসজিদ। প্রতি শুক্রবার অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলিম জুমার নামাজে অংশ নিয়ে থাকে। পাশাপাশি মাহে রমজানে এখানে খতমে তারাবির নামাজও আদায় করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ২০২২সালে প্রথম রমজানে এশা ও খতমে তারাবির নামাজ আদায়ের মধ্যে দিয়ে মসজিদটিতে সালাত আদায়ের শুভ সূচনা করা হয়েছিলো। স্থানীয় বাসিন্দা এবং ধর্মপ্রাণ পর্যটকরা এ মসজিদে সালাদ আদায় করে থাকে।
দারুস সালাম জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. জাফর আলম বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন মূলত এই মসজিদের ত্বত্ত্বাবধানে রয়েছেন। তারা অর্থযোগানসহ নানারকম সহযোগিতা করে থাকে। পাশাপাশি স্থানীয় হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী এবং আগত পর্যটকদের দান-অনুদানের টাকায় মসজিদের সার্বিক খরচ মেটানো হয়।
তিনি আরও বলেন, উঁচু পাহাড়ের কারণে মসজিদে পানি সংকট রয়েছে। যে কারণে ওযুসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত সব পানি কিনে আনতে হয়। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার লিটার পানি খরচ হয়। তবে সকলের সহযোগিতার কারণে খরচ মেটাতে কোন সমস্যা হয় না।

