কৃত্রিম কয়লা তৈরি কাঠ পুড়িয়ে, হুমকিতে পরিবেশ

সিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেটঃ ২৯ জুন, ২০২৪ | ৭:১২
সিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেটঃ ২৯ জুন, ২০২৪ | ৭:১২
Link Copied!

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলিয়া ইউনিয়নের জালশুকা গ্রামে অবৈধভাবে গাছের গুঁড়ি ও কাঠ পুড়িয়ে কৃত্রিমভাবে কয়লা তৈরি হচ্ছে, এতে দূষিত হচ্ছে চারপাশ, হুমকিতে পরিবেশ। কারখানার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দূরের কথা, নিয়মনীতির বালাই নেই। চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, ফসল নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া আশপাশের এলাকার মানুষ কাশিসহ নানা সমস্যায় ভুগছে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাটুরিয়ার উপজেলার দিঘুলিয়া ইউনিয়নটি ধলেশ্বরী নদীবেষ্টিত ইউনিয়ন। দিঘুলিয়া ইউনিয়নের জালশুকার গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে কৃত্রিমভাবে কয়লা তৈরি করা কারখানা। চারদিকে বিভিন্ন ফসলের মাঠ ও বসতবাড়ি। নদীঘেঁষা কারখানায় প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিভিন্ন বনজ ও ফলদ গাছ কেটে বিশেষ তৈরি চুলায় কাঠ পোড়ানো হয়। এসব চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ ও নদীর জীববৈচিত্র্যের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য এবং কমে যাচ্ছে জমির উর্বরতা।

ইট দিয়ে চুল্লি বানিয়ে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। চুল্লির চারদিকে রাখা গাছের গুঁড়ি ও শুকনা কাঠ-লাকড়ি। ২টি দুটি চুল্লিতে আগুন দিলে কালো ধোঁয়ায় চারদিক ছেয়ে যায়। চারপাশে বিভিন্ন আকারের গাছের গুঁড়ি রাখা হয়েছে। প্রতিটি চুল্লিতে ১৫০-২০০ মণ কাঠ ফেলে আগুন দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

কারখানার শ্রমিক ফারুক বলেন, ইট দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে চুল্লি তৈরি করা হয়েছে। প্রথমে সাটুরিয়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কাঠ সংগ্রহ করা হয়। চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি ও ইট দিয়ে বন্ধ করে দেই। এই প্রক্রিয়া করতে ২ থেকে ৩ দিন লাগে প্রতিটি চুল্লিতে সাজাতে। বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে ৫-৭ দিন সময় নিয়ে কাঠ পুড়াই। তখন কাঠ থেকে কয়লা হয়ে যায়। আগুন নিভানোর ৩ দিন পর চুল্লিতে কয়লাগুলো বাহিরে বের করি। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। পরে এই কয়লা শীতল করে কয়লা পরিষ্কার করে কেজিতে ওজন দিয়ে বস্তা বন্দি করি। এ কয়লা মহাজন এসে নিয়ে যায়। আমাদের এসব কয়লা বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁর মালিকরা কিনে নেন। হোটেল মালিকরা এ কয়লা দিয়ে রুটি ও নান রুটি তৈরিতে ব্যবহার করে।

সবুজ পরিবেশ আন্দোলনের মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি রাজ্জাক হোসেন রাজ বলেন, এমনিতেই গাছ কাটা ও তা জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। উপরন্তু, কালো ধোঁয়া পরিবেশ ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন বনজ সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে ধোঁয়ার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত নানা রোগব্যাধি দেখা দিচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, দিঘুলিয়া ইউনিয়নের জালশুকা গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন জালশুকা গ্রামে কৃত্তিমভাবে কয়লা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন। এখানে গাছের গুঁড়ি ও কাঠ দিয়ে কয়লা তৈরি হচ্ছে। কারখানায় রয়েছে দুটি চুল্লি। পাবনা জেলা থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে কাজ করা হচ্ছে। ধলেশ^রী নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে এ অবৈধ কয়লার কারখানা।

বিজ্ঞাপন

কারখানার শ্রমিক ফারুক আরো বলেন, এক মণ কাঠ পুড়িয়ে পাঁচ-ছয় কেজি কয়লা পাওয়া যায়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতি দফায় ১৫০ থেকে ২০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। পোড়ানো কয়লা ঠান্ডা করে ব্যবসার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রেতাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রতি মণ লাকড়ি ১৬০ টাকায় কিনে প্রতি কেজি কয়লা ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি করেন।

দিঘুলিয়া ইউনিয়নের পূলশুরা গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল রানা বলেন, চারপাশে বাড়িঘর আর ফসলি জমি ও পাশেই ধলেশ্বরী নদী। কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশের ক্ষতি করে কয়লা তৈরির কারখানা চলছে? সারাক্ষণ কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। ধোঁয়ার কারণে বয়স্ক আর শিশুরা সব সময় কাশছে। তরুণ- যুবকদেরও একই অবস্থা।কয়লা কারখানার চুল্লি পর্যাপ্ত উঁচু না থাকায় কালো ধোঁয়ায় বিভিন্ন ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

কারখানার মালিক আবুল হোসেন, তাদের কারখানায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেই। ভাই ব্যবসা করে খাইতেছি। কারও তো কোনো ক্ষতি করছি না।

দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিউল আলম জুয়েল বলেন, কয়লা কারখানার চুল্লির কারণে এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এলাকাবাসী শত শত ব্যক্তির স্বাক্ষর নিয়ে লিখিত অভিযোগ আমাকে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় একাধিকবার তুলে ধরেছি। তারপরও এ কয়লা তৈরির কারখানা বন্ধ করা যাচ্ছে না।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শান্তা রহমান বলেন, আমার উপজেলার দিঘুলিয়া ইউনিয়নের জালশুকা গ্রামে কাঠ দিয়ে কয়লা তৈরির বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। বিষয়টি দ্রুত খোঁজখবর নিয়ে ওই সব কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

ট্যাগ: