উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের এক বছরেও পূরণ হয়নি দাবি, শেষ হয়নি তদন্ত

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১১:০২
ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১১:০২
Link Copied!

সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এক বছর পেরিয়ে গেছে টানা এক মাস আন্দোলনের পর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি পাঁচ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে আসেন তবে এখনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় হতাশ সাধারণ শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা পাঁচটি দাবি আটটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন। দাবি পূরণে আশ্বাস পেলেও গত এক বছরে কয়েকটি ছাড়া এর বাস্তবায়ন তাঁরা দেখতে পারছেন না। তাঁদের প্রধান দাবিই ছিল উপাচার্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া। অথচ উপাচার্য এখনো স্বপদেই আছেন। ছাড়া অধিকাংশ দাবি পূরণ না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে ক্রমে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। এমনকি আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের একাডেমিক প্রশাসনিক কাজে হয়রানির পাশাপাশি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার অভিযোগও আছে। ঘটনার তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত কমিটির তদন্ত এখনো শেষ হয়নি

গত বছরের ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কয়েক ছাত্রী। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৬ জানুয়ারি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করা হলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। অবস্থায় আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ সাধারণ শিক্ষার্থী যোগ দেন। তখন এই আন্দোলন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। শিক্ষার্থীরা ক্লাসপরীক্ষা বর্জন করে নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন

বিজ্ঞাপন

১৯ জানুয়ারি বিকেল থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। ২৬ জানুয়ারি সকালে অনশনস্থলে এসে লেখক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাবেক অধ্যাপক ইয়াসমিন হক শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। তবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। পরে ১১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সিলেট সার্কিট হাউসে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বৈঠক করেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত পাঁচ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলি লাঠিপেটার ঘটনাকেঅনাকাঙ্ক্ষিতঅভিহিত করে ঘটনার ২৮ দিন পর দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন উপাচার্য

শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে ছিল দ্রুততম সময়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অপসারণ, সব প্রশাসনিক পদে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের ওপর দায়ের হওয়া হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের সব অনলাইন লেনদেনের অ্যাকাউন্ট অবিলম্বে খুলে দেওয়া এবং পুলিশি হামলার শিকার শিক্ষার্থী সজল কুন্ডুকে এককালীন এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাঁকে যোগ্যতা অনুযায়ী অন্তত নবম গ্রেডের স্থায়ী সরকারি চাকরি প্রদান। এর বাইরে শিক্ষার্থীরা দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সংকট সমাধানে আটটি প্রস্তাবনাও উপস্থাপন করেন

আন্দোলনের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবিই ছিল উপাচার্যের পদত্যাগ। অথচ তিনি এখনো স্বপদে আছেন। প্রাক্তন বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওপর দায়ের হওয়া দুটো মামলার একটি প্রত্যাহার করা হলেও অপরটি এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। পুলিশের শটগানের গুলিতে গুরুতর আহত সজল কুন্ডু এখনো শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁকে চাকরি দেওয়া তো দূরের কথা, তাঁর সুচিকিৎসা পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়নি। বারবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিত মৌখিকভাবে এসব মনে করালেও তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে

বিজ্ঞাপন

বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।  বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ ধরনের ঘটনা যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেটাই চাই। বিশ্ববিদ্যালয় যেন সব সময় ভালো থাকে, সেটাই চাই। এর বাইরে আমার কোনো মন্তব্য নেই।

ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি এক বছরেও তাঁদের তদন্ত শেষ করতে পারেনি। বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. রাশেদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি পাঁচবার বসেছিল। তখন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষককর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। তবে তখন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। ছাড়া ক্যাম্পাসে তখন তদন্তকাজ পরিচালনার মতো পরিস্থিতিও ছিল না। পদবির কারণে কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া অনেক শিক্ষকের পদবি এখন বদলেছে, ফলে কাজ এগোয়নিা

 

আন্দোলনে পুলিশের শটগানের গুলিতে গুরুতর আহত সজল কুন্ডু বলেন, ‘পুলিশের হামলার শিকার হয়ে আমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। আমার শরীরে ৮৩টি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। চিকিৎসার সম্পূর্ণ দেখভাল করার কথা থাকলেও অস্ত্রোপচারের পর সরকার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার পরবর্তী চিকিৎসার ব্যাপারে আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। স্প্লিন্টার শরীরে নিয়ে অসহায় অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় অতিকষ্টে আছি। টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছি না।

ট্যাগ: