ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার সারাদেশের আইনজীবীদের কলঙ্কিত করেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেটঃ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৬:২১
নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেটঃ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৬:২১
Link Copied!
হাইকোর্ট বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার বাংলাদেশের লিগ্যাল ইতিহাসে কালো দাগ দৃষ্টি করেছে। দেশের সকল আইনজীবীদের কলঙ্কিত করেছে, শক্তি প্রয়োগ করে। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এসব কথা বলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাসে হট্টগোল, বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের ‘গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের’ অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীর হাজিরার পর এ–সংক্রান্ত শুনানিতে হাইকোর্ট এসব কথা বলেন।

তিন আইনজীবী হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তানভীর ভূঞা, মো. আক্কাস আলী ও আইনজীবী জুবায়ের ইসলাম।

এর আগে গত ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের এজলাসে হট্টগোলের ওই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নজরে আসার পর হাইকোর্ট গত ৫ জানুয়ারি আদালত অবমাননার স্বতঃপ্রণোদিত রুল দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে তাঁদের ভূমিকার ব্যাখ্যা দিতে ১৭ জানুয়ারি হাজির হতে নির্দেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

ধার্য তারিখে তিন আইনজীবী আদালতে হাজির হন। সেদিন তাদের পক্ষে সময়ের আরজি জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। এর আগে সকালে তিন আইনজীবী আদালতে হাজির হন।

তিন আইনজীবীর পক্ষে আদালতে শুনানিতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আবদুন নূর, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ ও আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

শুরুতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আজ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোর্ট শুরু হয়েছে। সরকারপক্ষসহ সবাই বসেছিলেন। আর কিছু কাজ আছে, পরিস্থিতি আরও উন্নতি হবে। এ সময় আদালত বলেন, গত ৫ তারিখে রুল (আদালত অবমাননা) ইস্যু হলো। মামলার তারিখের আগে

বিজ্ঞাপন

আগে নড়াচড়া করলেন। সবকিছু তো আগের মতোই ছিল। মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, এক মাস সময় দেন।

আদালত বলেন, হলফনামাও দেননি। তখন মোমতাজ উদ্দিন ফকির ‘না’ সূচক জবাব দেন। আইনজীবীর উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, দিন যাচ্ছে, বিবেচনার বিষয়ও বাড়ছে। সময় নষ্ট করছেন। এর কনসিকোয়েন্স ফেস করতে হবে। আমরা সময় দেব না। আপনারা জবাব দিলে দেন, না দিলে না দেন। আমরা আমাদের মতো এগুবো। ২০ তারিখে (ফেব্রুয়ারি) আসবে।

আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আরেকটু সময় দেন। ২০ তারিখে সমিতির অনুষ্ঠান আছে, সভাপতির ভোজ। এক মাস সময় দেন।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোর্ট শুরু হয়েছে।

আদালত বলেন, এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে গুড ফেইথে। কিন্তু কিছুই করেননি। কোর্টকে অচল করে রেখেছেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে। এ সময় আইনজীবীরা বলেন, আজ থেকে কোর্ট চলছে। আদালত বলেন, কিসের চলছে? সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে। আর সেখানে (ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালত) মানুষ গেলে মাস্তানি করছেন, সবকিছু আমরা দেখছি মিডিয়ায়।

এ সময় মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, সরি, মাই লর্ড। তিন আইনজীবীর পক্ষে অপর আইনজীবী আবদুন নূর বলেন, ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট সবাই বসেছিলেন।

একপর্যায়ে আদালত বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বার (জেলা আইনজীবী সমিতি) বাংলাদেশের লিগ্যাল ইতিহাসে কালো দাগ দৃষ্টি করেছে। সব আইনজীবীদের কলঙ্কিত করেছে, শক্তি প্রয়োগ করে।

এ সময় আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির মার্চে তারিখ রাখার আরজি জানান। আদালত বলেন, মানুষের ভুল হতে পারে একদিন, এরোগেন্সি দেখাতে পারে। তাই বলে কন্টিনিউয়াসলি। ইজ ইট এ কনন্ডাক্ট?

মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ঘাটতি নেই।

আদালত বলেন, সমিতির সভাপতি হোক, সদস্য হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বার কাউন্সিল আছে। বার কাউন্সিল কিছু না করলে আমরা এখান থেকে করব।

মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো লেসেস নেই। আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি, মাই লর্ড। উনি আবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, আমি ও আমার ব্রাদার (সহকর্মী বিচারপতি) খবরের কাগজে চোখ রাখি, বারে কি চলছে। এটি কোনো কথা হলো কোর্ট বসলে বিচারপ্রার্থীদের ডিসটার্ভ করছেন। আদালত বর্জন করলে সমিতিতে বসে বসে করেন। কোর্টের বারান্দায় বিচারপ্রার্থীকে হুমকি দেবেন। কোনো আইনজীবী গেলে তাকে থ্রেট দেবেন।

মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, এটি করা হচ্ছে না। এটি অতিরঞ্জিত। কেউ যদি বলে তা অতিরিক্ত। আদালত বলেন, আমরা নিউজ দেখতে পাচ্ছি। তখন মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, না, অনেক ধরনের নিউজ হয়। আদালত বলেন, তাহলে রিজয়েন্ডার দেননি কেন? মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, মিটিং করেছি, পদক্ষেপ নিচ্ছি। অনেক অংশীজন আছেন, তাদের নিয়ে আমরা বসেছি। আমাদের কোনো লেসেস নেই মাই লর্ড।

এ সময় আইনজীবী আবদুন নূর বলেন, ইনস্টিটিউশনকে ডেটোরয়েট করার জন্য কেউ কেউ আছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আবদুন নূর ও বার কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, ডেভেলপমেন্ট যদি করেনও গত এক মাসের দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।

মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, অস্বীকার করছি না, দায়ভার নেব তো। আদালত বলেন, দায়ভার নেয়ার জন্যই তো এখানে দাঁড়িয়েছেন।

মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আমরা অফিসার্স অব দ্যা কোর্ট, দায়ভার নেবো না কেন? আমাদের রেসপনসিবিলিটি আছে।

আদালত বলেন, আপনাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সেদিন এক মাস সময় দিয়েছি। মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, মার্চে একটি তারিখ দেন। সাঈদ আহমেদ বলেন, যেহেতু কোর্ট শুরু হয়ে গেছে, তাই সময়টা দেন।

আদালত বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি রাখা হচ্ছে। মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ২২ তারিখে ঢাকা বারের নির্বাচন, মার্চে দেন। পরে আদালত ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

ট্যাগ: