মানিকগঞ্জে ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ

শাহানুর ইসলাম
আপডেটঃ ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ৩:২০
শাহানুর ইসলাম
আপডেটঃ ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ৩:২০
Link Copied!
Shahanur Islam

 

প্রযুক্তির কল্যানে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়।এ কথা সত্য বলে প্রমান করছেন মানিকগঞ্জের কৃষকরেরা।ভারতের পঞ্চিম বঙ্গের ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল দেখে মানিকগঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা লাভজনক মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেছে।এই পদ্ধতি ইতিমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কৃষকদের মাঝে।

প্রথমে আবাদি জমি প্রস্তুত করে তারপর বীজতলা বা বেড তৈরি করা হয়।একটি বেড তার পর একটি ড্রেন আবার বেড তারপর ড্রেন,এভাবেই এ পদ্ধতিতে জমি তৈরি করা হয়।তারপর মালচিং পেপার ( এক ধরনের পলিথিন) দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় বেডগুলোকে।এরপর নিদ্দির্ষ্ট দূরত্বে মালচিং পেপার ছিদ্র করে বা গোল করে কেটে চারা রোপন করা হয়।এ পদ্ধতিকে মালচিং বা পলি মালচিং পদ্ধতিও বলা হয়।ভারতের পঞ্চিম বঙ্গে এটাকে পলি মালচিং পদ্ধতি বলে।

বিজ্ঞাপন

ইউটিউব দেখে প্রশিক্ষন নেয়া জেলার শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক মোঃ জুয়েল হোসেন (এরশাদ) বলেন আমাদের এলাকায় গত বছর দু-একজন মালচিং পদ্ধতিতে আবাদ করে বেশ সুফল পেয়েছিল ।তাই আমি এবার  বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেল দেখে এ পদ্ধতিতে আবাদ করতে উৎসাহিত হই।মূলত আমি এ পদ্ধতিটা ইউটিউব দেখেই শিখের্ছি।আমি এবার ৮ বিঘা (কারেন্ট মরিচ) হাইব্রিড মরিচ এই পলি মালচিং পদ্ধতিতে আবাদ করেছি।

তিনি বলেন,এ পদ্ধতিতে গাছের গোড়ায় পানি শুকিয়ে যায় না এবং গাছের প্রয়োজনীয় পানি সব সময় থাকে।ড্রেনের মধ্য দিয়ে পানি দেয়ার ফলে পাশের বেডের মাটি পানি ধরে রাখে যা অতি রোদ্রেও শুকিয়ে যায় না।যেখানে ৬ বার সেচ দিতে হতো সেখানে এখন ২বার সেচ দিলেই পুরো সিজন হয়ে যায়।অপর দিকে আগে অতি বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গাছ মরে যেত কিন্তু ড্রেন পদ্ধতি থাকার কারনে পানি জমতে পারে না এবং বেডের উপর গাছ থাকাতে একটানা বৃষ্টি হলেও গাছের কোন ক্ষতি হয় না।এ পদ্ধতিতে জমিতে আগাছা জন্মাতেও পারে না এবং আগাছা পরিস্কারের জন্যে আমাদের অতিরিক্ত খরচ করতে হয় না।অপর দিকে আগাছা মুক্ত করতে যে বিষ প্রয়োগ করা হয় তা জমি ও উৎপাদিত ফসলের জন্যেও ক্ষতিকর।এ পদ্ধতিতে আবাদ করলে মানুষ বিষমুক্ত সবজি ও ফসল পাবে।আমার জমিতে মরিচ গাছ বুড়া হয়ে গেলেই তা তুলে ফেলে এই বেডেই আমি শশা ও করলা বীজ বপন করবো।এভাবে একই বেডে একাধিক ফসল আবাদ করা যায়।

তবে এ পদ্ধতিতে  বিঘা প্রতি প্রথমেই মালচিং পেপার দেয়াতে বাড়তি খরচ হয় প্রায় ১৪/১৫ হাজার টাকা।আসলে মোট খরচ যে বেশি তা নয় ,বিষয়টি হচ্ছে মৌসুমের প্রথমেই খরচটা করতে হয়।প্রথমেই খরচটা করতে হয় বিধায় আমাদের কৃষকদের বেশ বেগ পেতে হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন,৪ফুট প্রশস্ত এবং ৪০০ ফুট লম্বা একটা মালচিং পেপার রোলের দাম ৫ হাজার টাকা।এ রকম একটা রোল ১৮ শতাংশ জমিতে দেয়া য়ায়। সরকারি ভাবে যদি সত্যিকারে যারা মালচিং পদ্ধতিতে আবাদ করে তাদের ভর্তুকি বা কমসূদে লোন দেয়া হতো তাহলে অনেকেই এই পদ্ধতিতে আবাদে উৎসাহিত হতো।দেশের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেত।

মালচিং পদ্ধতিতে আবাদকারী কৃষক মোঃ জসিম উদ্দিন ও মোঃ আওলাদ হোসেন খান বলেন,এখন আমাদের সবচেয়ে যা বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে হাতে-কলমে প্রশিক্ষন দেয়া।আমাদের দাবী আমাদের দ্রুত এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষন দেয়া হোক।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ্ বলেন,এ পদ্ধতিটা অবশ্যই ভালো এবং আমরা কৃষকদের এ পদ্ধতিতে আবাদে উদ্ভুদ্ধ করছি।সিংগাইর এলাকায় আমরা কৃষকদের উন্নত চাষাবাদের প্রশিক্ষন দিচ্ছি এবং সব জায়গাতেই এটা করা হবে।

কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক(শস্য) ড.মমতাজ সুলতানা বলেন,পলি পেপারের জন্যে এখনও কৃষক পর্যায়ে ভর্তুকির কোন নির্দেশনা আমাদের নেই।তবে আমরা কৃষকদের সকল প্রকার কারিগরি সহযোগীতা দিতে সদা প্রস্তুত।

জেলার শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর,শিমুলিয়া,উলাইল,উথুলি সহ অন্য ইউনিয়নগুলো,হরিরামপুর,সাটুরিয়া উপজেলা সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এই মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে দেখা যাচ্ছে।মরিচ,শশা,টমোটো,করলা,বেগুন সহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করা হচ্ছে মালচিং পদ্ধতিতে।

গ্রামাঞ্চলে চলতেই চোখে পড়ছে মালচিং পদ্ধতির চাষাবাদ।কৃষকদের দাবী দ্রুত প্রশিক্ষন প্রদান,কৃষি উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম কমানো,ভর্তুকি প্রদান সহ কৃষি বান্ধব কর্মসূচি গ্রহন করা হোক।

মোঃ শাহানুর ইসলাম

মানিকগঞ্জ

০১৭১১-৮১৯৭৫১

ট্যাগ: