বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগে সরকারী অর্থ হরিলুট

তানিয়া কন্সট্রাকশন (ডকইয়ার্ড) এর সাথে যৌথ ব্যবসা করছেন পরিচালক মো: শাহজাহান!

রোস্তম মল্লিক
আপডেটঃ ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ৬:২৯
রোস্তম মল্লিক
আপডেটঃ ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ৬:২৯
Link Copied!

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)তে চাকুরী করে স্বল্প সময়ে কয়েকজন পরিচালক কোটি কোটি টাকা ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই দুদক অনুসন্ধান করছে আবার অনেকে রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এসব পরিচালকরা বছরের বছর একই চেয়ারে থাকায় তারা সরকারী অর্থ লোপাটের সুযোগ পাচ্ছেন। ২ বছর পর পর বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বদল হলেও তারা বদল হয়না।

সুত্র মতে বিআইডব্লিউটিএর মোট ১৪ টি উইং রয়েছে। আর প্রত্যেকটি উইং এ আছেন একজন করে পরিচালক। প্রকৌশল বিভাগে আছে একজন করে প্রধান প্রকৌশলী। মুলত: এরাই নিয়ন্ত্রণ করেন গোটা প্রতিষ্ঠানকে। এসব পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলীরা চেয়ারম্যানকে যা বুঝান তিনি তাই বুঝে থাকেন।

উইংগুলো হলো: চেয়ারম্যান দপ্তর, সদস্যবৃন্দ দপ্তর, প্রশাসন ও মানব সম্পদ,পরিকল্পনা ক্রয় ও সংরক্ষণ, নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন, বন্দর ও পরিবহন, ল্যান্ড এন্ড এস্টেট, ড্রজিং, প্রকৌশল যান্ত্রিক নৌ-প্রকৌশল, আইসিটি, হাইড্রোগ্রাফি, চিকিৎসা, হিসাব, অর্থ, নিরীক্ষা, ডিজাইন এন্ড মনিটরিং। এর মধ্যে নৌ প্রকৌশল, ড্রেজিং, নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন, প্রশাসন ও মানব সম্পদ,পরিকল্পনা ক্রয় ও সংরক্ষণ, নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগে দুর্নীতি হয় বেশি।

বিজ্ঞাপন

প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠানটিতে যে সরকারী অর্থ বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয় তার সিংহভাগই নানা কৌশলে লোপাট করা হয়। ফলে বিআইডব্লিউটিএ কাংঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। নদীপথ নাব্যতা ফিরে পায় না। নৌ দুর্ঘটনা হ্রাস পায় না। হাজার হাজার অবৈধ নৌযান নদী পথে চলাচল করে। নদীর সীমান (জমি) দখল বন্ধ হয়না। ফাকার চার পাশের নৌপথ চালু থাকে না। উদ্ধারকারী নৌযানগুলো অলস পড়ে থাকে। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের নামে সরকারী অর্থ হরিলুট করা হয়। ড্রেজারগুলো কেকার পড়ে থাকে। অপ্রয়োজনীয় যানবাহন ক্রয় করে সরকারী অর্থ অপচয় করা হয়। অন্য দিকে কর্মচারি নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়খাতে করা হয় ভয়াভহ দুর্নীতি।

এ সব বিষয় নিয়ে প্রায়ই জাতীয় দৈনিক ও টিভি চ্যানেলে সংবাদ প্রতিবেদন ছাপা হলেও সেগুলোর সঠিক তদন্ত হয়না। দুএকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সেগুলোর রিপোর্ট আলোর মুখ দেথে না। নৌ মন্ত্রণালয়ে যেয়েই সেগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়। আর এ করাণেই পরিচালকরা বাঁধাহীনভাবে দুর্নীতি করার সুযোগ পাচ্ছেন। লোপাট হয়ে যাচ্ছে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা।
দৈনিক টেলিগ্রাম পত্রিকার পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে আমরা ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজ প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হলো।

কি হচ্ছে নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগে: বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিভাগ নৌ সংরক্ষন ও পরিচালন বিভাগ। এই বিভাগের পরিচলাক মো: শাহজাহান। তিনি দীর্ঘদিন যাবত এই দায়িত্বে রয়েছেন। তার দায়িত্ব হলো সারা দেশের নৌবন্দরগুলো সংরক্ষন পরিচালন ও নদী পথের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ। এজন্য তার অধিনে রয়েছে একটি পাইলট বাহিনী। বন্দরগুলোর তায়িত্বে রয়েছে বেশ কিছু সিপিএস। এছাড়া বন্দরগুলো সংরক্ষনের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন শত শত কোটি টাকা। অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি তানিয়া কন্সট্রাকশন( ডকইয়ার্ড) এর মালিক বাহার মিয়ার সাথে যৌথ মালিকানায় একটি ডকইয়ার্ড নির্মাণ ও পরিচালনা করছেন। এই ডকইয়ার্ডের নাম তানিয়া ডকইয়ার্ড বা কন্সট্রাকশন। এটি নির্মাণে প্রায় শত কোটি টাকা খরচ হয়েছে। পরিচালক মো: শাহজাহানের এই ডকইয়ার্ডে মালিকানা থাকায় দিনি তার দপ্তর থেকে পল্টুন নির্মাণ ও মেরামতের প্রায় সব কাজই এই তানিয়া কন্সট্রাকশন বা ডবইয়ার্ডকে প্রদান করছেন। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের চোখে ধুলো দিয়ে গত এক দশক ধরে তিনি এই যৌথ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। যা সরকারী চাকুরী শৃংক্ষলা বিধির পরিপন্থি। পল্টুন মেরাত বা নির্মাণ না করেই তানিয়া কন্সট্রাকশন বা ডকইয়ার্ডের মাধ্যমে জাল বিল করে ভুয়া বিল ভাউচারে তিনি কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়টি দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করলেই তার থলের বিড়াল বেরিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিআইডব্লিউটিএর দেশ প্রেমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।
পরিচালক মো: শাহজাহানের বিরুদ্ধে আরো যে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে তা হলো-তিনি তার নিকট আত্মীয় মো: আশরাফকে বিধি বর্হিভুতভাবে খুলনার সিপিএস নিয়োগ করেছেন। সিপিএস সানোয়ারকে সরিয়ে আশরাফকে এই দায়িত্বে বসিয়ে তিনি খুলনা অঞ্চলের নদী পথে চলাচলকারী গ্যাসের জাহাজ ও প্রটোকল জাহাজ থেকে পাইলট নুরুর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঘুস (চাঁদা) আদায় করছেন। গত মাসে কয়লা জাহাজ থেকে চাঁদা আদায়ের ঘটনা সংবাদপত্রে ফলাও করে প্রচার হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

বিজ্ঞাপন

ট্যাগ: