দিল্লির জি-টুয়েন্টি সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো বিশ্ব

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১২:৩৫
ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১২:৩৫
Link Copied!

সম্মেলন শুরুর একদিন আগে ভারত পৌঁছে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। প্রতিবেশী দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের এ বৈঠকে বহুল আলোচিত তিস্তা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাসহ জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো প্রাধান্য পাওয়ার কথা ছিলো বলে ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় আসামসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এখন আঞ্চলিক কানেকটিভিটি ও বাণিজ্যের বড় কেন্দ্র হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া কানেকটিভিটি, সমুদ্র অর্থনীতি ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতিতেও ঢাকাকে দিল্লি পাশে চায় বলে আলোচনা রয়েছে।

নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, শুক্রবার তিনি তাঁর বাসভবনে তিনটি বৈঠক করবেন। মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ জগন্নাথ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বাসভবনে বৈঠক হবে। তার ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, এই দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করা এবং উন্নয়নমূলক সহযোগিতাকে আরও জোরদার করার সুযোগ দেবে বৈঠকগুল শনিবার সকাল থেকে নয়াদিল্লিতে শুরু হবে ১৭তম জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন।

বিজ্ঞাপন

জি-২০ গোষ্ঠীর সদস্য না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশকেই ওই সম্মেলনে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক ভারত।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯-১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠানে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দিতে নয়াদিল্লি গিয়েছে।

সম্মেলনে কারা যোগ দিচ্ছেন, আর দিচ্ছে না : নয়াদিল্লিতে শুরু হচ্ছে ২দিনব্যাপী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। এতে যোগ দিচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী দেশগুলোর নেতারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ এসব রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং খাদ্য ও জ্বালানির দামবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। তবে জোটের সদস্য হয়েও কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না।

গুরুত্বপূর্ণ এই সম্মেলনে যারা যোগ দিচ্ছেন : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্মেলনে যোগ দিবেন। সম্মেলনে যোগ দিয়ে ইউক্রেনের যুদ্ধের সামাজিক প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তন ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চান তিনি। এছাড়া শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন বাইডেন। সবার নজর এখন এই বৈঠকের দিকে। এই দুই নেতার আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক বেশ কিছু বিষয় গুরুত্ব পাবে। সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারতে এটা তার প্রথম সরকারি সফর। এরই মধ্যে ভারতের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তিনি। ভারতে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানান, তার আশা, ‘ভারতের জামাই’ হিসেবে তিনি নয়াদিল্লিতে জামাই আদর পাবেন।

বিজ্ঞাপন

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাও সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। জি-৭-এর বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সমালোচনার নেতৃত্ব দিতে পারেন তিনি। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এখন ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছেন। জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্স-তিন দেশের সফরের অংশ হিসেবে সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজও সম্মেলনে থাকবেন। তিনি এরই মধ্যে বলেছেন, রাশিয়া ও চীন সম্মেলনে না থাকলেও সম্মেলনটি গুরুত্বপূর্ণ।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল সম্মেলনে থাকছেন। সম্মেলনে তিনি উত্তর কোরিয়ার পরমাণু হুমকি ও ক্ষেপণাস্ত্রের উস্কানির নিয়ে কথা বলবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন আফ্রিকান ইউনিয়নের নেতারাও। এরই মধ্যে নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজালি আসোমানি। এবারের সম্মেলনেই আফ্রিকান ইউনিয়নকে জোটের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ঘোষণা দেয়া হতে পারে।এছাড়া সম্মেলনে আরও থাকবেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

সম্মেলনে যারা থাকছেন না: কয়েকদিন আগেই জানা যায়, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নয়াদিল্লির জি-২০ সম্মেলনে থাকছেন না। তার জায়গায় থাকবেন চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও সম্মেলনে থাকছেন না। ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সম্প্রতি পুতিনের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এ কারণে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের মতো জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তার পরিবর্তে নয়দিল্লিতে রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। বাংলাদেশ সফর শেষে এরই মধ্যে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন তিনি। সম্মেলনে থাকছেন না স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সম্মেলনে যোগ পারছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়া মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজও সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না। এর জন্য কোনো কারণও জানাননি তিনি। সদস্য নয় এমন আরও ৯টি দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, মিশর, মরিশাস, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাই এই সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো বিশ্ব।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক– শহিদুল ইসলাম সুজন

ট্যাগ: