মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন পাবনার কৃষকদের

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৯ আগস্ট, ২০২২ | ২:২৮
ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৯ আগস্ট, ২০২২ | ২:২৮
Link Copied!

দেশি সবুজ মাল্টার চেয়ে বিদেশি কমলা রঙের মাল্টার দাম বেশি। তাই দেশি মাল্টা বাজার দখল করেছে। পাশাপাশি এটি রাসায়নিকমুক্ত হওয়ায় ক্রেতারা বেশি পছন্দ করছেন। ফলে পাবনার চাষি ও ব্যবসায়ীরা দেশি মাল্টায় লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে ভোক্তারাও কম দামে নিরাপদ ফল পাচ্ছেন। পাবনার কৃষি বিভাগ জানিয়েছে আবহাওয়া অনুকূল ও মাটি ভালো থাকায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার চাষ জেলায় দ্রুত বাড়ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, পাবনায় এ বছর অর্ধশত হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ হয়েছে। প্রায় ৭৫ টন মাল্টা উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার বাজারমূল্য প্রায় কোটি টাকা। জেলায় বারি মাল্টা-১ জাতটি চাষ হচ্ছে বেশি।

এ জাতের গাছে মধ্য ফাল্গুন মাস থেকে মধ্য চৈত্র পর্যন্ত সময়ে ফুল আসে এবং ভাদ্র-আশ্বিণ মাস থেকে ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়। মাল্টা চাষে অল্প খরচ, কিন্তু লাভ অনেক বেশি। তাই একদিকে যেমন এ ফলের আমদানি কমবে, তেমনি মিটবে স্থানীয় চাহিদা। আর স্থানীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব হলে বাইরে থেকে মাল্টা আমদানি কমলে না হলে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয়ী হবে।

বিজ্ঞাপন

পাবনা কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (ক্রপ) মো. রোকনুজ্জমানা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ১০০ থেকে ১২০টি মাল্টা চারা রোপণ করে একটানা ২০ বছর ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটা গাছ থেকে প্রথম বছর ১০ থেকে ২০ কেজি হারে ফল পাওয়া যায় এবং দ্বিতীয় বছর থেকে গড়ে এক মণের বেশি ফল সংগ্রহ করা যায়।

সাধারণত চারা রোপণের দুই বছর পর গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। বারি মাল্টা-১ উচ্চ ফলনশীল ও নিয়মিত ফলদানকারী ভিটামিন সি’সমৃদ্ধ। পাকা ফল দেখতে আকর্ষণীয় সবুজ এবং খেতে সুস্বাদু।

মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন পাবনার কৃষকরা

বিজ্ঞাপন

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর গ্রামের চাষি আলহাজ্ব শাহজাহান আলী বাদশা জানান, তিনি তার মা-মণি কৃষি খামারে এক একর জায়গার উপর মাল্টা বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনি জানান, খরচ প্রথম বছরেই বেশি হয়। চারাসহ অন্যান্য খরচ বাবাদ বিঘা প্রতি ৩০ হাজার টাকার মত খরচ হয়। পরের বছরগুলোতে শুধু পরিচর্যা বাবদ খরচ হয়।

তার গাছ থেকে ফলন পাওয়া শুরু হয়েছে। তিনি আরও জানান, একটি পূর্ণ ফলদ গাছ থেকে বছরে প্রায় এক মণ ফলন পাওয়া যায়। প্রতি কেজি ১০০ টাকা পাইকারি দর হিসেবে গাছ প্রতি প্রায় ৪ হাজার টাকা পাওয়া যায়। আর বিঘা প্রতি ৩০০ গাছ লাগিয়ে প্রতি বছরে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। যা অন্য ফল বা ফসলি জমি থেকে আয় করা কঠিন। তার খামারের সব মাল্টা গাছ বারি মাল্টা-১ জাতের।

চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের মাঝগ্রামের মাল্টা চাষি ইয়াছিন আলী স্বপন জানান, ২০১৮ সালে বাড়ির সামনের সমতল জঙ্গল পরিষ্কার করে ১৮ কাঠা জমিতে ৮২টি বারি-১ মাল্টার গাছ রোপণ করি। ২০১৯ সালেই ২১ কেজি মাল্টা বিক্রি করি এবং কিছু খাই। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফুল আসে।

সেপ্টেম্বর থেকে মাল্টা সংগ্রহ শুরু করি। খুচরা ১৫০ টাকা কেজি এবং পাইকারি ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করি। এ বছর গাছে বেশ মাল্টা ধরেছে। মাল্টা চাষ লাভজনক বলে মনে হচ্ছে। তিনি জানান, বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে এক বিঘা জমিতে ১০০ গাছ থেকে পরিণত বয়সে লাখ টাকারও বেশি মাল্টা উৎপাদন করা সম্ভব।

মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন পাবনার কৃষকরা

লাউতিয়া গ্রামের কেএম মোবারক হোসেনের ছেলে তরুণ মাল্টা চাষি কেএম তানভীর আহমেদ। শখের বসে বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তুলেছেন মাল্টা বাগান। দুবছর আগে মাল্টার চারা রোপণ করেছেন।

এরই মধ্যে চারা গাছ নতুন ডাল-পালায় বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। এখন অনেকেই শখের বসে হলেও মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

মথুরাপুর ইউনিয়নের উথুলী গ্রামের সানোয়ার হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এনএটিপি-২ প্রকল্পের আওতায় দেড় বিঘা জমিতে আমি ও আমার ভাই গড়ে তুলেছি শখের মাল্টা বাগান। আমাদের মাল্টা বাগান সফলতা পেয়েছে। এবার ফলন পুরোদমে শুরু হয়েছে। গত বছর প্রায় ৭০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। এবার আরও বেশি টাকার মাল্টা বিক্রি হবে বলে তারা আশাবাদী।

তিনি আরও জানান, তাদের মাল্টা চাষ, ফলন ও লাভ দেখে অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন। হলুদ মাল্টা বিদেশি ফল। এই মাল্টায় রাসায়নিক দেওয়া হয়। আমাদের দেশের সবুজ মাল্টা যখন খাওয়ার উপযুক্ত হয় তখন আমরা কোনো ওষুধ বা রাসায়নিক হয় না। এজন্য সবুজ মাল্টার খুব চাহিদা।

পাবনার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে যেমন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা অনেক মাল্টা বাগান দেখা গেছে তেমনি বাজার ছেয়ে গেছে দেশি সবুজ মাল্টায়। সবুজ মাল্টার চাদিাও দিন দিন বাড়ছে বলে ব্যবসায়িরা জানান। পাবনা শহরের বিসমিল্লাহ ফল ভান্ডারের কর্মচারীরা জানান, দেশি মাল্টা রাসায়নিকমুক্ত ও নিরাপদ।

খেতেও মিষ্টি। তাই এতে গ্রাহকের চাহিদা বাড়ছে। ফল ব্য�

ট্যাগ: