ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী নন্দিনী সরকারের অকাল মৃত্যু স্তব্ধ করে দিয়েছে পুরো এলাকা। যে মেয়েটি একসময় সংবাদপত্রের পাতায় জায়গা পেয়েছিল সাফল্যের গল্পে, আজ তার নামই উঠছে বিদায়ের শিরোনামে।
- আর্থিক টানাপোড়নের সংসারে বেড়ে উঠলেও মেধায় ও মননে আলোকিত ছিল নন্দিনী। ঢাকা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় ১৩৩তম হয়ে পরিবারের মুখে যে হাসি ফুটিয়েছিল, আজ সেই বাড়িতে নেমে এসেছে অন্ধকার। মেধাবী নন্দিনীর সাফল্যের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সুদূর লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খবরটি পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
তিনি দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতাকে সঙ্গে নিয়ে নন্দিনীর পরিবারের পাশে দাঁড়ান। রিতার মাধ্যমে বিশেষ প্রতিনিধি দল আর্থিক সহায়তা পাঠায় নন্দিনীর পরিবারকে।
হ্যালোবাইক চালক সুনীল সরকার নন্দিনীর পড়া লেখার দুঃশ্চিন্তার ভার ভাগ করে নিতে এগিয়ে আসেন আরও অনেকে।
নন্দিনীর জীবনের গল্প তখন অনুপ্রেরণার এক অধ্যায়।হঠাৎই পূজার ছুটিতে কাকার শ্বশুর বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে সেই উজ্জ্বল জীবন থেমে যায়। দুর্গাপূজার আনন্দঘন মুহূর্তে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক ঘটনা। অচেতন হয়ে পড়েন নন্দিনী। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে গিয়েছিল।
নন্দিনীর ছোট বোন বিনা সরকার অভিযোগ করলেন, তার বোনের মৃত্যুকে ঘিরে বিভিন্ন সংবাদপত্রসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে নানা মুখরোচক গুজব,অপপ্রচার আর কৌতূহলভরা কাহিনি। কেউ বলেন, নন্দিনী নাকি কোনো অ্যালকোহল পানীয় পান করেছিল—কারও দাবি, পূজার রাতে সে কিছু অস্বাভাবিক খেয়েছিল। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা এসব দাবি একেবারেই অস্বীকার করেছেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নন্দিনীর ছোট বোন বিনা সরকার যুগান্তরকে বলেন, বাড়ী থেকে অসুস্থতা নিয়ে কাকার শ্বশুর বাড়ী ঝিনেদাতে পুজার অনুষ্ঠানে যাই। বাবা মাকেও তার শারীরিক অসুস্থ্যতার কথা বলেনি। হোস্টেলে তেমন ভালো খাবার না খেতে পেরে শারীরিক ভাবেও কিছু কাহিল ছিলো নন্দিনী।
বিনার দাবী করেন আমা বোন নেশাজাতীয় (অ্যালকোহল) খায়নি ও খুব ভদ্র মেয়ে ছিলো। সবাই যেভাবে বলতেছে, সেভাবে কিছুই না। বিনা জানান, পূজার ছুটিতে তারা একসঙ্গে গণেশ কাকার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। গণেশ কাকা নন্দিনী ও বিনাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখতেন।
বিনা বলেন, ওখানে গিয়ে শুধু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছিল। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ালাম, একটু ভালো লাগছিল। কিন্তু রাত একটা-দুইটার দিকে অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। পরিবার জানায়, হোস্টেলে থাকাকালীন নন্দিনী ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতো না। দুর্বল শরীরে পড়াশোনার চাপ সামলাতে হিমশিম খেত। বিনা বলেন, পরশুদিন ওর পরীক্ষা ছিল, বইও সঙ্গে নিয়েছিল। সারাদিন পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো তার বোন।
আমরা শুধু মন্দিরে গিয়েছিলাম একসাথে। ও কিছুই খায়নি না অ্যালকোহল, না সেভেন আপ। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের ফলাফল এখনও হাতে পায়নি পরিবার। তারা শুধু চায়, সত্য প্রকাশ পাক যাতে সমাজের সামনে নন্দিনীর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে। আজ সেই পরিবারের ঘরে নীরব কান্না, স্মৃতিতে ফিরে আসে মেয়ের হাসিমুখ। একসময় যে নন্দিনী সাফল্যের শিরোনামে ছিল, আজ তাকে ঘিরে লিখতে হচ্ছে বিদায়ের সংবাদ। তবু মানিকগঞ্জবাসীর মুখে একটাই কথা নন্দিনীর মতো মেয়েরা হারিয়ে যায় না, তারা হয়ে থাকে আলোর প্রতীক।
পূজা উদযাপনে ঝিনাইদহে চাচার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মেধাবী ছাত্রী নন্দিনী রানী সরকারের। রোববার ভোরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়ও খেয়ে মারা গেলেও নন্দিনীর মৃত্যু নিয়ে নতুন করে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। শুরুতে পরিবার অ্যালকোহলের কথা জানালেও এখন আর কেউ মুখ খুলছেন না। বান্ধবীদের সঙ্গে অ্যালকোহল পান করেছেন- বলা হলেও নন্দিনীর সঙ্গে আসলে কারা ছিল, কে সরবরাহ করেছে বা অন্যরা পান করলেও তারা কেন অসুস্থ হলেন না-এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর মিলছে না।
পারিবারিক সুত্রমতে, মানিকগঞ্জ জেলার গিলন্ড গ্রামের ইজিবাইকচালক অনিল সরকারের দুই মেয়ের মধ্যে নন্দিনী বড়। দুর্গাপূজার সপ্তমীর দিনে পূজার উৎসব উপভোগ করতে ছোট বোন বিনা (১৭), চাচা গণেশ সরকারের স্ত্রী হাসি ও চাচাতো ভাই (গণেশ সরকারের ছেলে) সমিরকে সঙ্গে নিয়ে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ভাণ্ডারীপাড়ায় বিজন সরকারের বাড়িতে আসেন। অষ্টমীর দিনে আসেন চাচা (নন্দিনীর) গণেশ সরকার। গাজীপুর প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলস নামের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ট্রান্সপোর্ট সুপারভাইজার পদে চাকরি করেন তিনি।
নন্দিনীর বাড়ী গিয়ে দেখা গেলো, বাড়টি যেন শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। নন্দিনীর স্বজনসহ প্রতিবেশীর মুখেও বিষাদের ছাপ। কথা হয় নন্দিনীর বাবা অনিল সরকার ও মা সীমা সরকারের সাথে। মেয়ের অকাল মৃত্যুতে শোকাহত বাকরুদ্ধ। তাদের মেয়েকে হারিয়ে তাদের জীবনের সব স্বপ্ন বিলীন হয়ে গেছে। নন্দিনীকে ঘিরে শুধু তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো বলে জানালেন। তবে মেয়ের মৃত্যুর আসল রহস্য ধোঁয়াশা। মানিকগঞ্জ থেকে তারা এখনো জানতে পারছেননা কি ভাবে তাদের নন্দিনী অকাল প্রয়ান ঘটলো।
এদিকে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুম খান যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। নন্দিনীর মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তা জানা যাবে মৃত্যুরে