রাজবাড়ীর শহরে প্রতিদিন সকাল ৯টায় এক অদম্য উদাহরণ দেখা যায়। হুইলচেয়ারে বসে ছোট্ট দোকান বসিয়ে জীবনের লড়াই চালাচ্ছেন ২০ বছর বয়সী শাওন শেখ। অন্যরা ভিক্ষা বা সাহায্যের উপর নির্ভর করতে পারে, কিন্তু শাওন নিজ পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সংসার চালাচ্ছেন।
শাওন শেখ রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের মাটিপাড়া গ্রামের ভূমিহীন রিকশাচালক শফিক শেখের মেজ ছেলে। একসময় রাজবাড়ী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০২১ সালে হঠাৎ এক অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দুই পায়ের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ চিকিৎসার পরও সুস্থ হতে না পারায় ২০২৪ সালে তিনি হুইলচেয়ারে বসে নতুন জীবন শুরু করেন।
প্রতিদিন শাওন হুইলচেয়ারে বসে শহীদ স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে চিপস, চানাচুর, আচারসহ নানা খাবার বিক্রি করেন। স্কুলের শিক্ষার্থী ও পথচারীরাই তার নিয়মিত ক্রেতা। হাসিমুখে বিক্রি করেন, গুনে নেন দিনের উপার্জন। সেই আয়েই মায়ের ওষুধ, ছোট ভাইয়ের খাবার এবং পরিবারের দৈনন্দিন খরচ মেটাচ্ছেন।
শাওনের সংগ্রাম ও ইতিবাচক মনোভাব সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। এক ক্রেতা শিক্ষার্থীর অভিভাবক অনন্যা দত্ত বলেন, ওর হুইলচেয়ারে বসে দোকান চালানোর দৃশ্য দেখে মনটা জাগে। নিজ পরিশ্রমে জীবনের লড়াইটা চালাচ্ছে, হাসি-চোখে নতুন আশা ফুটে থাকে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনয় কুমার বিশ্বাস বলেন, শাওন আমাদের বিদ্যালয়ের পাশে দোকান চালায়। কেউ তাকে ভিক্ষা করতে দেখেনি, বরং নিজ পরিশ্রমেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এটি সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
শাওনের মা সাহানা বেগম বলেন, আমাদের কোনো জমি জমা নেই। ভাড়া বাসায় থাকি। আমার ছেলে হুইল চেয়ারে বসে দোকান চালায়, নিজের পরিশ্রমে সংসার টানে। ওর কষ্ট দেখে বুকটা ফেটে যায়। আমার একটাই চাওয়া সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হোক। ও তো ভিক্ষা চায় না, শুধু নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়।” “সরকারের কাছে একটাই অনুরোধ আমার ছেলের দিকে একটু নজর দিন।
রাজবাড়ীর সমাজসেবা অধিদপ্তরর উপ পরিচালক রুবাইয়াত ফেরদৌস বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, দীর্ঘদিন শাওন প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে না। সে যদি সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করে, তাহলে আমরা অবশ্যই তাকে সার্বিক সহযোগিতা করবো এবং খতিয়ে দেখব কেন তার ভাতাটি বন্ধ রয়েছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারিয়া হক বলেন, শাওন আমাদের সমাজের এক অনুপ্রেরণার উৎস। নিজের পরিশ্রমে স্বাবলম্বী হয়েছে এটি সত্যিই গৌরবের। শুনেছি, ওর পরিবার ভূমিহীন এবং ভাড়া বাসায় থাকছে। উপজেলা প্রশাসন তার ও তার মায়ের চিকিৎসার খরচ এবং কৃষি জমি বন্দোবস্তের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমি চাই সমাজের ভালো মানুষরাও একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিন।

