দুর্নীতির আখড়া বিআরটিএ: সংবাদ প্রকাশের পরও ব্যবস্থা নেয়নি বিআরটিএ, অভিযানে দুদক

Spread the love

জাহিদুল হক চন্দন 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ( বিআরটিএ) এর জেলা কার্যালয়গুলোতে জেঁকে  বসেছে দুর্নীতি। যানবাহনের রেজিষ্ট্রেশন, ফিটনেস,ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ নাগরিক সেবা পেতে সেবাপ্রার্থীদের পদে পদে ঘুষ দিতে হচ্ছে। বিআরটিএ সদর দপ্তর থেকে জেলা কার্যালয়গুলোতে দালালদের উৎপাত বন্ধে নোটিশ করলেও দালালদের উৎপাত কমেনি। বিআরটিএ জেলা কার্যালয়গুলোতে দায়িত্বরত অফিস কর্তা ব্যক্তিদের আশকারায় দালালদের দৌরাত্ব বেড়েছে । জেলা কার্যালয়গুলোর এসব অনিয়মের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও কারো বিরুদ্ধে কার্যত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন না বিআরটিএ সদর দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন । 

চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক টেলিগ্রাম পত্রিকায় ” ঘুষ দুর্নীতির আখড়া বিআরটিএ ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনে কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী,  টাঙ্গাইল, চাঁদপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের নানা অনিয়ম তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নজরে এনে ওই পাঁচটি কার্যালয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন সংক্রান্ত এবং সেবাখাতে অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন এ প্রতিবেদক। তথ্য অধিকার আইনে কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী,  টাঙ্গাইল, চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেলা প্রশাসক,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক,  চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগীয় বিআরটিএ এর কার্যালয় এবং বিআরটিএ’র সদর দপ্তরে পৃথকভাবে একই তথ্য চেয়ে আবেদন করা হয়। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক ও টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়,চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিআরটিএ কার্যালয় থেকে আংশিক তথ্য সরবরাহ করা হয়। কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা বিভাগীয় বিআরটিএ কার্যালয় এবং বিআরটিএ’র সদর দপ্তর থেকে তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী কোন উত্তর পর্যন্ত প্রদান করা হয়নি। এছাড়া বিআরটিএর সদর দপ্তরের বিরুদ্ধে আপিল করলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় প্রদানযোগ্য তথ্য সরবরাহ করার অনুরোধ করে ২৯ এপ্রিল সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। আপিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের পরও বিআরটিএ সদর দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন তথ্য সরবরাহ করেননি।

ফলে  ৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক টেলিগ্রাম পত্রিকায় ” ঘুষ দুর্নীতির আখড়া বিআরটিএ ” শিরোনামে প্রকাশিত

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর দুর্নীতি বন্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে দালিলিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিআরটিএর জেলা কার্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, বিআরটিএ’র বিভাগীয় কার্যালয় এবং সদর দপ্তর অনিয়ম বন্ধে কোন কার্যত ব্যবস্থা গ্রহন না করায়  প্রতিবেদনটি দুদকের নজরে আনা হয়। পরে প্রতিবেদনে অভিযোগ উঠা জেলা কার্যালয়গুলোসহ সারাদেশে ৩৫ টি জেলা কার্যালয়ে একই দিনে অভিযান পরিচালনা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক)। ওই অভিযানে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম জেলা কার্যালয়গুলোতে একাধিক অনিয়মের সত্যতা পায়। 

কিশোরগঞ্জ ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি টেস্ট বোর্ড ( ডিসিটিবি) এর সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জেসমিন আক্তার। দালালদের মাধ্যমে ঘুষের টাকা পরিশোধ করলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় এমন অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেননি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। আপনি ডিসিটিবি বোর্ডের প্রধান হিসেবে এমন অনিয়ম বন্ধে আপনার স্বপ্রনোদিতভাবে কাজ করা উচিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগ দিলে কাজ করতে সুবিধা হয়। আপনারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলেই কি দুদক অভিযান করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। 

নারায়গঞ্জ ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি টেস্ট বোর্ড ( ডিসিটিবি) এর বোর্ডের সদস্য নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশেন এডমিন শেখ মো:আব্দুল করিম বলেন, বিআরটিএ’র ড্রাইভিং পরীক্ষার পুরো সময় নিজে উপস্থিত থাকি। তুলনামূলকভাবে আগের তুলনায় পরীক্ষার্থীরা সচেতন হওয়ায় পাশের হার বেশি। ফলে সেবাপ্রার্থীরা এখন আর বাঁকা পথে হাঁটেন না। পরীক্ষায় অনিয়মের মাধ্যমে পাশ করানোর সুযোগ নেই। 

নারায়ণগঞ্জ ডিসিটিবি’র সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, বিআরটিএ অফিসে পূর্বে কি হয়েছে আমার জানা নেই। আমি সম্প্রতি যোগদানের পর থেকে নিশ্চিত করে বলতে পারি ড্রাইভিং পরীক্ষায় কোন অনিয়মের সুযোগ কেউ পাচ্ছে না। তারপরও কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুদকের অভিযানে একজন দালাল আটক হলেও প্রমানের অভাবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

সার্বিক বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিআরটিএর অফিসেগুলোতে সেবা পেতে যে হয়রানি হতে হয় তার কোন সুরাহা কর্তৃপক্ষ করেন না। যারা ঘুষ বাণিজ্য,দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করেন তাদের বলার মতো কোন শাস্তি হয়না। ফলে এ সেবাখাতটি দিন দিন অনিয়মের খাতে পরিনত হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত। বিআরটিএর দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।

দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম  বলেন, গত ৭ মে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস সনদে ঘুষ লেনদেনসহ দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য রোধে দেশের ৩৫টি বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) কার্যালয়ে একযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগেও বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মের অভিযোগে দুদক অ়ভিযান পরিচালনা করেছে।

বিআরটিএ সদর দপ্তরের চেয়ারম্যান মো:ইয়াসিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। 

সংবাদ প্রকাশের পরও ব্যবস্থা নেয়নি বিআরটিএ, অভিযানে দুদক

Scroll to Top