মানিকগঞ্জে প্রতিবছর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভবন নির্মাণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে এর সঙ্গে বাড়ছে অগ্নি নিরাপত্তা ঝুঁকিও। জেলার সাতটি উপজেলার প্রায় ৩০০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিসের সনদ নবায়ন না করেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনেক প্রতিষ্ঠান একেবারেই কোনো ফায়ার সনদ ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। এতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ রয়েছে মারাত্মক অগ্নি ঝুঁকিতে।
মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস জানায়, জেলার অনেক ভবনে নিজস্ব ফায়ার অ্যালার্ম, জরুরি নির্গমনের (এক্সিট) পরিকল্পনা, পানির উৎস কিংবা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) নেই। এ কারণে ৩০টি বড় বাণিজ্যিক ভবনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলায় ২৩২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আর ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ১৪৬টি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জেলার সাতটি উপজেলায় অবস্থিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, স’মিল, অয়েল মিল, ইটভাটা, বেকারি, ব্যাটারি ব্যবসা, সিএনজি পাম্প, প্লাস্টিক কারখানা, কেমিক্যাল ও গ্যাস সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ভবন, দোকানপাট, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টস কারখানার একটি বড় অংশই চলছে ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স ছাড়াই।
মানিকগঞ্জ সদর, সিংগাইর, দৌলতপুর, সাটুরিয়া, ঘিওর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলাজুড়ে এমন লাইসেন্স নবায়নবিহীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৮৫ ছাড়িয়ে গেছে।
তথ্য অধিকার আইনে পাওয়া নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৩টি স’মিলের ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স নবায়ন হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— মেসার্স খালেক স-মিল, রিজিয়া, গোলাপী, মেসার্স মুক্তি, মেসার্স সুমন ট্রেডার্স অ্যান্ড স’ মিল
মেসার্স আব্দুল কাদের, রিডিয়া, গোলাগী, মেসার্স ফারিয়া, মেসার্স তছিরন, আরশেদ, জয়বা, সুজাত, রাতিয়া, মিজান, মেসার্স পিয়াস, অ্যান্ড ট্রেডার্স, মেসার্স ইমন টিম্বার অ্যান্ড স-মিল, মেসার্স নাদিয়া সাদিয়া, মেসার্স সুমন ট্রেডার্স অ্যান্ড স-মিল, আরশেদ (অন্য অবস্থান) ও মেসার্স ইমন টিম্বার অ্যান্ড স-মিল (অন্য অবস্থান)।
লাইসেন্স নবায়নবিহীন ক্লিনিক, রিহ্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ২৩টি। এগুলো হলো, স্বপ্ন আসক্ত পূর্ণবাসন কেন্দ্র, জমজম জেনারেল হাসপাতাল, ইউনাইটেড জেনারেল হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ অ্যাপোলো জেনারেল হাসপাতাল, ইউনিক মেডিকেল সেন্টার, নিউ ভিশন চক্ষু হাসপাতাল, সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিরাময় এক্স-রে প্যাথলজি, নিরাময় নার্সিং হোম, মানিকগঞ্জ সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতাল, প্রাইম জেনারেল হাসপাতাল, চাষীর হাসি হাসপাতাল, দেশবাংলা স্পেশালাইজড হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, যমুনা জেনারেল হাসপাতাল, স্বপ্ন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাব ২৪ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ অ্যাপোলো হাসপাতাল, মেঘনা জেনারেল হাসপাতাল, টেক কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল, ডেলটা জেনারেল হাসপাতাল, মেসার্স মেরী স্টোপস ক্লিনিক, এশিয়ান মেডিকেল সেন্টার, পালস ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
লাইসেন্স নবায়নবিহীন শিল্প কারখানা রয়েছে ১৮টি। এর মধ্যে জে অ্যান্ড জে এসেনসিয়াল প্রা. লি., মেসার্স কালাম কটন এন্টারপ্রাইজ, নাহার গার্ডেন প্রা. লি., পারলী ইন্টারন্যাশনাল লি., পরানী ইন্টারন্যাশনাল লি., মেসার্স বিজলী ক্যাবলস, মেসার্স এলুমিনা প্রা. লি., দি ব্রিটিশ পেইন্ট লি., ম্যাক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লি., আফা স্টীল মিলস ইন্ডা., রাতুল অটো এইচ ডিল, ওরিয়েন্টাল এগ্রো এন্টারপ্রাইজ (দুইবার), ভালাম কটন এন্টারপ্রাইজ, ওলিগ্যানু ফ্যাশন ফুটওয়্যার লি., মেসার্স অস্টেলিয়া বাংলাদেশ সোলার পাওয়ার লি., বসুন্ধরা কাল কমপ্লেক্স, কার্বন হোল্ডিং লি.।
লাইসেন্স নবায়নবিহীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩২টি। এসবের মধ্যে মেসার্স মোল্লা ব্রিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং কোং, জলিল অয়েল মিল, হাজী অয়েল মিল, সিয়াম অয়েল মিল, ভাড়ারিয়া বাজার, মেসার্স ইউনিসন ফুডস, মেসার্স নূর বেকারি, মেসার্স আওয়াল অ্যান্ড ব্রাদার্স, আ. সালাম ট্রেডার্স, নিউ প্রিন্স এন্টারপ্রাইজ, নিউ অপূর্ব অ্যারাইটিজ, মেসার্স খোরশেদ আলম অ্যান্ড সন্স, কাদের অ্যান্ড গ্রান্ডসন্স, আব্দুল গফুর অ্যান্ড সন্স, বিগ বাজার সুপার শপ, ভাই ভাই স্টোর, মেসার্স প্যারেন্টস এন্টারপ্রাইজ, উৎসব জেনারেল স্টোর, লতা ইলেকট্রনিক্স, আড়ং ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, চান মিয়া ট্রেডার্স, মেসার্স মা হার্ডওয়্যার অ্যান্ড বার্জার পেইন্ট ও লক্ষস অ্যান্ড সন্স হার্ডওয়্যার, মিড লাইফ ট্রেডিং, ওহাবানিয়া হোটেল, আল মোবারক হোটেল, শহীদ স্মরণী, নিউ ডিলাক্স ব্যাটারী ও মেসার্স চাঁন ব্যাটারী, জে অ্যান্ড জে ফিলিং স্টেশন।
সিংগাইর উপজেলায় ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স নবায়ন নেই এমন ১৭টি স-মিলের। সেগুলো হলো— মেসার্স হাবিবুর রহমান স’ মিল, মেসার্স করিম, মেসার্স আশা, মেসার্স তপু, মেসার্স সরকার, মেসার্স খাজা গরীবে নেওয়াজ, মেসার্স ভাই ভাই, মেসার্স নিউ সোনার বাংলা, মেসার্স বিসমিল্লাহ, মেসার্স বাঁধন, মেসার্স লাবণ্য, মেসার্স মুক্তি, মেসার্স হাজী, বাস্তা সুন্দর বন, মেসার্স মজনু টিম্বার, মেসার্স হাবিব টিম্বার অ্যান্ড ও মেসার্স রিফাত আফাত টিম্বার অ্যান্ড স-মিল।
ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই চলমান ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে— মেসার্স আনোয়ার ট্রেডার্স, মেসার্স আসলাম ট্রেডার্স, মেসার্স সোহেল ট্রেডার্স, তৃপ্তি হিয়া ট্রেডার্স, মেসার্স জসিম এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আরশেদ স্টোর, মারুফ টেলিকম, হ্যানি সুজ কহিলাতলী, কানা এন্টারপ্রাইজ, গোলজার মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ।
লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া পরিচালিত ৪টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। তা হলো—সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পেন্ডস স্যাটেলাইট সেন্টার, সিংগাইর ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ইসলামিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার হাসপাতাল।
ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন নেই এমন ১৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো— অ্যারিস্টোক্যাট সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, ডিজাইন কনসেন্ট ইট্টা লিমিটেড, মেসার্স জ্যাট হোল্ডিংস, মেসার্স রেজা মার্বেল অ্যান্ড গ্রানাইট ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রা.) লিমিটেড, অসবয়লারস লিমিটেড, মেসার্স ডিয়েনকো লিমিটেড, মেসার্স সুইট এগ্রোভেট লিমিটেড, সেঞ্চুরি লেদার ওয়ার্কস (প্রা.) লিমিটেড, কে এস এ কোকোয়া অ্যান্ড চকলেট ইন্ডাস্ট্রিজ, নীলিমা ব্যাগ লিমিটেড, লাবা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, গ্রীন এগ্রো কমপ্লেক্স, উডমার্ক ফার্নিচার, মেসার্স এফ কে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, মেসার্স সাগরিকা ফুড প্রোডাক্টস, মেসার্স এ জে মেটাল, মেসার্স লাবিন প্লাস্টিক অ্যান্ড আয়রন, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ।
ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন নেই ২টি বেকারি ও ১টি রেস্টুরেন্টে। তা হলো, মেসার্স গোলাপ শাহ বেকারি, মুন্নি বেকারি, আল আরাফাত হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউজ।
ঘিওর উপজেলায় ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন নেই ৭৭টি প্রতিষ্ঠানে। তার মধ্যে ৭টি স ও রাইস মিল মেসার্স সাগর ট্রেডার্স স-মিল, মেসার্স জনপ্রিয় রাইস মিল, মেসার্স মা রাইচ মিল, মেসার্স রাইস মিল, মেসার্স রোদেলা স-মিল, রুবেল স-মিল, বড়টিয়া খাদেম স-মিল।
১৫টি স্টোর— মেসার্স শহীদ স্টোর, মেসার্স চন্দন স্টোর, রাজ কুমার স্টোর, মা-বাবার দোয়া স্টোর, ফরিদ স্টোর, মোহাম্মদ হানিফ স্টোর, ভাই ভাই স্টোর, জননী স্টোর, আলী ভ্যারাইটিজ স্টোর, মোহালী বাজার, তুষার স্টোর, ভাই ভাই ভ্যারাইটিজ স্টোর, আদ-দ্বীন জেনারেল স্টোর অ্যান্ড মিনি সুপারমল, প্রীতম ভ্যারাইটিজ স্টোর।
সাতটি হার্ডওয়্যার ও মেশিনারিজ— মেসার্স সুবর্ণা হার্ডওয়্যার, সুনিল হার্ডওয়্যার পয়েন্ট, মেসার্স খান মেশিনারিজ, শ্যামল মেশিনারীজ স্টোর, স্মরণীকা স্টিল অ্যান্ড তাহমিনা ইলেকট্রিক, মেসার্স শ্রাবন্তী স্টিল (নবায়ন প্রক্রিয়াধীন), মেসার্স সেঞ্চুরি প্রিন্টিং।
১১টি এন্টারপ্রাই—শাওন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স তৃপ্তি এন্টারপ্রাইজ, ফাইভ স্টার এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স দেশ এন্টারপ্রাইজ (বানিয়াজুরী), মেসার্স মারুফ এন্টারপ্রাইজ, ঘোষ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজ, নিউ বলাকা এন্টারপ্রাইজ, আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, কাজী শায়ন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ইয়াদ ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ।
এ ছাড়া আটটি ট্রেডার্স—সোহান অটো ট্রেডার্স, খান ট্রেডার্স, নান্নু ট্রেডার্স, মেসার্স মজিদ ট্রেডার্স, মেসার্স ফারুক অ্যান্ড সন্স, মেসার্স আলামিন ট্রেডার্স, মেসার্স মমতাজ ট্রেডার্স, মেসার্স হারুন ট্রেডার্স। চার টি টেলিকম—মা ডেকোরেটর, মোল্লা ডেকোরেটর, দুর্জয় টেলিকম, বাবা মাইজ ভাণ্ডারী। অন্যান্য হলো, পূজা এলপিজি গ্যাস স্টেশন, বিসমিল্লাহ বেকারি, একতা সাইকেল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স স্টোর, মাধুবী সাইকেল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স স্টোর ও সাব্বির ফ্যাশন।
হরিরামপুর উপজেলা ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন নেই ওই প্রতিষ্ঠানগুলোরমধ্যে তিনটি স-মিল। তা হলো- মেসার্স আজিজস-মিল, হরিদাস ও তিরত্ন স-মিল। দুইটি বেকারি—গৌতম বেকারি, তিশা ছোয়া বেকারি। দুটি ক্লিনিক—আনোয়ার হাসপাতাল, রেইনবো ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান—খান এন্টারপ্রাইজ।
দৌলতপুর উপজেলায় ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন নেই, ওই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পঁচটি স-মিল—মেসার্স আনিছ, মেসার্স ভাই ভাই, বিসমিল্লাহ, মেসার্স হক টিম্বার অ্যান্ড স-মিল ও মেসার্স সুমন স-মিল। একটি বেকারি—মেহেদী দুর্জয় বেকারি। দুইটি ক্লিনিক—মেসার্স আব্দুল বাতেন কোম্পানি (এবিসি ক্লিনিক), সেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
এ ছাড়া আরও ১৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তা হলো— সিয়াম সাদিয়া মোটরস, আল রাফি স্টোর, ভাই ভাই মেডিসিন হাউজ, মানু জেনারেল স্টোর, ভাই ডাই এন্টারপ্রাইজ, হাসমত ট্রেডার্স, জয়নাল এন্টারপ্রাইজ, জয় এন্টারপ্রাইজ, মা এন্টারপ্রাইজ, সালাম স্টোর, মোহাম্মদ আলী ট্রেডার্স, আল মদিনা এন্টারপ্রাইজ, ওহি এন্টারপ্রাইজ, তানজিনা এন্টারপ্রাইজ ও তানভীর হার্ডওয়্যার।
শিবালয় উপজেলায় ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া পরিচালিত হয় তিনটি প্রতিষ্ঠান—পদ্মা রিভার ভিউ, পাটুরিয়া, ভিশন ইম্পেরিয়াম, আফতাব ব্রিকস। তিনটি স-মিল—মেসার্স ইসলাম টিম্বার অ্যান্ড স-মিল, মেসার্স মান্নান টিম্বার ও মেসার্স আলম স-মিল।
এ ছাড়া আরও ১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে— সাহা স্টোর, মেসার্স মান্নান ট্রেডার্স, স্বপন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, মেসার্স জননী স্টোর, মেসার্স জননী এন্টারপ্রাইজ, অনিক স্টোর, শিখী ট্রেডার্স, মা-সাফিয়া ইলেকট্রিক অ্যান্ড হার্ডওয়্যার, মেসার্স মেহেদী এন্টারপ্রাইজ, জিসিকা এন্টারপ্রাইজ, তারাইল বাজার ও তনয় এন্টার।
বাংলাদেশ ফায়ার প্রিভেনশন অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং অ্যাক্ট ২০০৩ অনুযায়ী, ফায়ার লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা আইনত দণ্ডনীয়। এই আইন লঙ্ঘন করলে জরিমানা ও কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করার বিধানও রয়েছে। তবে বাস্তবতা বলছে, মানিকগঞ্জে এ আইনের প্রয়োগ অত্যন্ত দুর্বল।
জেলা শহর ও আশপাশে বহু প্রতিষ্ঠান নোটিশ পাওয়ার পরও লাইসেন্স নবায়ন করছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য মতে, ফায়ার সার্ভিসের সনদ পেতে হলে ভবন নির্মাণ ও ব্যবসা পরিচালনায় একাধিক বিধিনিষেধ মানতে হয়। অনেকে এসব নিয়ম মানতে না চাওয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে সনদ গ্রহণ করছেন না। আবার কিছুক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অনুমোদন পেতে ফায়ার সনদ বাধ্যতামূলক হওয়ায়, অনেকে সাময়িকভাবে সনদ গ্রহণ করেন। কিন্তু পরে আর তা নবায়ন করেন না। পরিদর্শন কর্তৃপক্ষ অনেক সময় প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না হলেও সনদ ইস্যু করে থাকেন—ফলে অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
এই প্রতিবেদক ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন না করা এমন ১৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়াটি জটিল ও ব্যয়বহুল হওয়ায় আগ্রহ কম। কেউ কেউ জানেনই না যে, লাইসেন্স একবার নেওয়ার পর নিয়মিত নবায়ন করতে হয়। আবার অনেকের মানসিকতা—’অন্যরা নিচ্ছে না, আমিও নিচ্ছি না’—এই প্রবণতা থেকে ব্যবসা চালাচ্ছেন।
উন্নয়নকর্মী ও কলেজ শিক্ষক ইয়াসিনুর রহমান বলেন, ‘মানিকগঞ্জ এখন ‘ফায়ার রেড জোন’-এ রূপ নিচ্ছে। অর্থনীতি ও নাগরিক নিরাপত্তা—দুয়োটিই এখন অগ্নি ঝুঁকিতে রয়েছে। লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা পরিচালনার ফলে ফায়ার সেফটির বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে একটি ছোট অগ্নিকাণ্ডেই ঘটতে পারে ভয়াবহ প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি। জরুরি ভিত্তিতে দরকার কার্যকর তদারকি, জনসচেতনতা এবং শাস্তির যথাযথ প্রয়োগ।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিদিন নতুন ভবন ও দোকান নির্মাণ হচ্ছে, কিন্তু কেউ ফায়ার সেফটি নিয়ে চিন্তা করছে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও তেমন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিচ্ছে না। পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে যে, আগুন না লাগা পর্যন্ত যেনো কারো ঘুম ভাঙে না। মানিকগঞ্জ এখন এক সুপ্ত আগ্নেয়গিরির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এই অবস্থার উত্তরণে চাই প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, জরিমানার কার্যকর বাস্তবায়ন, ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জনসচেতনতা।’
মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ফায়ার লাইসেন্স বা নবায়ন না থাকলে সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলে ফায়ার লাইসেন্সও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে দুই দপ্তরের মধ্যে প্রক্রিয়াগত জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো ভোগান্তিতে পড়ছে। আমরা নিয়ম মেনে বিবেচনাসাপেক্ষে ছাড়পত্র প্রদান করছি। পরিবেশের সুরক্ষা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ফায়ার লাইসেন্সও অপরিহার্য। তাই নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফায়ার লাইসেন্স ছাড়া কোনো ছাড়পত্র ইস্যু করা হয় না।’
মানিকগঞ্জ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমাদের দপ্তরের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক। ফলে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র ছাড়া এ দপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে দাহ্য পণ্যভিত্তিক কারখানাগুলোর ক্ষেত্রে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ফায়ার লাইসেন্স অপরিহার্য। আমরা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সচেতন করার চেষ্টা করি।’
মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল হামিদ মিয়ার সঙ্গে কথা বলেন প্রতিবেদক। তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন না করেই পরিচালিত হচ্ছে—এমন তথ্য আমার জানা নেই। তিনজন ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর এসব বিষয় দেখাশোনা করেন। তবে তারা কেউ আমাকে এমন কিছু জানাননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজসহ নানা স্থানে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) ড. মো. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন না করে কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে, ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। এ ছাড়া, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুরোধ থাকলে, জেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সহযোগিতা করবে।’