মঙ্গলবার

২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাঙ্গামাটিতে নিয়োগ জালিয়াতির প্রতিবাদে পার্বত্য জেলা পরিষদ কমপ্লিট শাটডাউন

কোটা বৈষম্য, প্রশ্ন জালিয়াতি, পরীক্ষার ফল প্রকাশে জালিয়াতি, নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ ও নভেম্বর মাসের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচী পালন করছে কোটা বিরোধী ঐক্যজোট, সাধারণ শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিক কমিটি।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে কর্মসূচীর শুরুতে জেলা পরিষদের মুল ফটক বন্ধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিক্ষুব্ধ নেতৃবৃন্দ।
এর আগে গত শনিবার রাতে সোমবার থেকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন ঘোষণা করেছে কোটাবিরোধী ঐক্যজোট, রাঙ্গামাটির সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে আন্দোলনকারীরা। সেইসঙ্গে, পরিষদ যদি দাবি পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে চেয়ারম্যানসহ সব সদস্যদের পদত্যাগে বাধ্য করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
একই দাবীতে গত বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটি জেলায় ছত্রিশ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণা দেয় কোটাবিরোধী ঐক্যজোট, রাঙ্গামাটির সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে আন্দোলনকারীরা। ঐদিন দুপুরে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণা দিলে ছয় দফা দাবী জানিয়ে হরতাল প্রত্যাহার করে নেয়।

গত শনিবার দুপুরে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার তার দপ্তরে বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধির সাথে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে নিয়োগ পদ্ধতি কি রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের আইনে হবে নাকি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া প্রঞ্জাপন অনুযায়ী হবে তা জানতে চেয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছে। তবে পার্বত্য মন্ত্রণালয় হতে দেয়া এক প্রেস বিঞ্জপ্তিতে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার তারিখসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ একক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানানো হলে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান খান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার ঘোষিত কোটা পদ্ধতি পার্বত্য জেলাগুলোতে একইভাবে  প্রযোজ্য হবে কিনা সে বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর মতামত গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে। এ প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কোটার বিষয়টি তিন পার্বত্য জেলায় কীভাবে কার্যকর করা হবে সে বিষয়ে মতামত চেয়ে ইতিমধ্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করেছে। লিখিত পরীক্ষা স্থগিতকরণ, পুনরায় তারিখ ঘোষণা করা, আবার স্থগিত করা ইত্যাদি বিষয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ কথার প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে এক প্রকার ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার সকাল সারে দশটায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ফটকে অনুষ্ঠিত কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন সদস্য মো. জনি, মো. ইমরান রুবেল, ইফতেখার রুবেল, রাকিব হাসানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
আন্দোলনকারীরা ৭% কোটা এবং ৯৩% মেধা নির্ধারণ করে পরীক্ষা গ্রহণসহ ৬ দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা রোধ করতে আন্দোলন করে আসছিল। আন্দোলনকারীদের দাবি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যমূলক কোটা কাঠামো বজায় রাখা হয়েছে, যার ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা দ্রুত সরকারি সর্বশেষ নীতিমালা অনুসারে পরীক্ষা গ্রহণ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার দাবিসহ ৬ দফা দাবি পেশ করে।
দাবি সমূহের মধ্য রয়েছে- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সবশেষে জারিকৃত  প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৯৩% মেধা ও ৭% কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করা, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রশ্নপত্র তৈরি পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে সরকারি ট্রেজারিতে সংরক্ষণ, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা, নিয়োগ পরীক্ষার আগে উপজেলা কোটা পৃথক প্রজ্ঞাপনে প্রকাশ, নিয়োগ পরবর্তী সময় প্রার্থীদের রোল নম্বর, নাম ও ঠিকানা প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা।
সেইসঙ্গে, ফলাফলে বাঙালি ও তফসিলভুক্ত উপজাতীয় জনগোষ্ঠী দুই তালিকা আলাদাভাবে প্রকাশ এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের জেলা পরিষদ আইনে উপজাতীয় অগ্রাধিকার নীতি মানা হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা প্রদান করার দাবী জানানো হয়।

এ বিভাগের আরও সংবাদ

spot_img

সর্বশেষ সংবাদ