মো:নোমান আহম্মেদ
বেসরকারি চাকুরি করে স্বল্প আয়ে কোনো মতে সংসার চলান । এরই মধ্যে মেয়ে মারিয়া আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এমন সাফল্যে আনন্দের পাশাপাশি আছে চিন্তা। মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবারটি। খবরটি শুনে জেলা প্রসাশক ড.মানোয়ার হোসেন মোল্লা তার অফিসে আজ মারিয়ার হাতে আর্থিক সহযোগিতার চেক হস্তান্তর করেন।
জানা যায়, মারিয়া আক্তারের বাবা আব্দুল জলিল হাওলাদার বেসরকারি একটি প্রাইভেট কম্পানিতে চাকুরি করে কোনোমতে সংসার চালান।
মারিয়ার বাড়ি মানিকগঞ্জ সাটুরিয়া উপজেলার গোলড়ার চরখন্ড গ্রামে।তিন বোনের মধ্যে মারিয়া মেঝো ।অনেক দিন আগেই বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায়। ছোট বোন মেধাবী শিক্ষার্থী। স্থানীয় গোলড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

১৭ জানুয়ারি এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯ জানুয়ারি ফলাফল ঘোষণায় দেখা যায়, মেধাতালিকায় মারিয়া আক্তারের অবস্থান ৪৭ তম। তালিকা অনুযায়ী, মারিয়া আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মারিয়া ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। তিনি স্থানীয় কামতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫, কানিজ ফাতেমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫, এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
কানিজ ফাতেমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, মারিয়াকে যাবতীয় সহায়তা স্কুল ও কলেজ থেকে করা হয়েছে। অভাব-অনটনের মধ্যেও মেয়েটি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় স্কুল ও কলেজের সবাই খুশি হয়েছেন।
মারিয়ার মা শিউলি আক্তার বলেন, ছোটবেলা থেকে মেয়েদের তেমন ভালো কোনো কিছু দিতে পারি নাই । স্কুলের মাস্টাররা বিনা বেতনে পড়িয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। মাস্টাররা সাহায্য-সহযোগিতা না করলে আমার মেয়েও এত দূর আসতে পারত না, ভালো রেজাল্ট করতে পারত না। মেডিকেলে আমার মেয়ে চান্স পাইছে, আমরা যে কত খুশি হইছি ,আশেপাশের মানুষও অনেক খুশি। কিন্তু পড়ালেখার খরচের কথা মাথায় আসলেই চিন্তায় আর আনন্দ থাকে না।’
আলাপকালে মারিয়ার বাবা আব্দুল জলিল হাওলাদার বলেন, বেসরকারি চাকরি করে স্বল্প উপার্জনের টাকায় দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চার সদস্যের সংসার চালান।
বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন মারিয়ার। কারণ একজন ডাক্তারই মানুষের বেশি সেবা করতে পারে।চাই।ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র রোগীদের সেবা করার ইচ্ছা। তিনি বলেন, ‘স্কুল ও কলেজে স্যাররা আমাকে সব সময়ই সাহায্য করতেন। বই থেকে শুরু করে সব সহায়তা পেয়েছি। এখন কেউ সাহায্য করলে আমার মেডিকেলে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। আমি যেমন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, অনেক দরিদ্র,মধ্যবিত্ত মানুষ আছে, যারা বিনা চিকিৎসায় মারা যায়, আমি তাদের সাহায্য করতে চাই, সেবা করতে চাই।