নিজস্ব প্রতিবেদক:
তীব্র নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে জেলার শিবালয় উপজেলার একটি হাই স্কুল, মুজিব কেল্লা, আশ্রয়ন প্রকল্প ও ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু বসতবাড়ি ও ফসলি জমি।নতুন করে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে আরো অনেক মসজিদ,মাদ্রাসাসহ কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।ভাঙ্গন আতংকে অনেক চিন্তিত নদী পারের মানুষজন।অবৈধ ড্রেজার বন্ধ এবং ভাঙ্গন রোধে সম্প্রতি মানবন্ধন করেছে তেওতা ইউনিয়নবাসী।এরা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের যমুনা নদীতে হাসিনা সরকারের আমলে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছে।বরাবরই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে।বিগত দিনে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই অবৈধভাবে এ বালু উত্তোলন করা হতো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পরই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যসহ জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। তাদের সিংহভাগই বিভিন্ন হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া আত্মগোপনে আছেন সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দলীয় শীর্ষ পদধারীরা।আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারাই মূলত শিবালয়ের বালুমহল নিয়ন্ত্রণ করতেন।গত ৫ আগস্টের পর তারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল।বর্তমানের প্রভাবশালীদের সহযোগতীতায় সেই আগের বালুচক্রের সদস্যরাই শুধু হাত বদলের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বালুমহালের সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক সূত্র জানায়, দেশের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই শিবালয়ের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ চলছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে শিবালযের প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ বালু উত্তোলন চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷
এ বিষয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বা কোনো অপরাধ করলে দল তার দায়ভার নেবে না।কেউ যদি অন্যায় অনিয়ম করে, তার দায় তাকেই নিতে হবে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আইন অমান্য করে উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়া এলাকায় যমুনা নদীতে কাটার বসিয়ে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু।বিগত সরকারের আমলেও এখানে ও এর আশপাশ এলাকায় বালু উত্তোলনের কারণে ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি ও বসতবাড়িসহ অনেক স্থাপনা। ভাঙনের কবলে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে শিবালয় ইউনিয়নের চরশিবালয় এলাকার সম্পূর্ণ অংশ। তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়ার এক তৃতীয়াংশ এলাকা নদী গর্ভে চলে গেছে।বাড়ি-ঘর হারিয়েছে হাজারও মানুষ।অব্যাহত নদী ভাঙ্গনে চরশিবালয় ও আলোকদিয়ায় স্থাপিত ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প-১-২, প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে রস্তম আলী হাওলাদার উচ্চ বিদ্যালয়, ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মুজিব কেল্লা, মধ্যনগর ও চরবৈষ্টমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।আলোকদিয়ায় যমুনা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।এমন পরিস্থিতিতে একদিকে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অপরদিকে চলছে নদী ভাঙ্গন।এতে চরম অাতংকে রয়েছেন নদী সিকস্তি এলাকার মানুষ।
অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক, শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে তেওতায় এলাকায় মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়রা জানান,যারা নদী থেকে মাটি তোলে তারা দলীয় প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা কিছু বলতে পারছি না।আপনারা যদি কিছু করতে পারেন। এরা ৭নং টাওয়ার এবং এর আশপাশ এলাকায় দফায় দফায় মাটি কাটছে।বিগত সরকারের আমলে যারা মাটি কেটেছে এখনও তারাই মাটি কাটছে।এরা আমাদের গ্রামটি শেষ করে দিয়েছে।আমাদের গ্রামটি দীর্ঘ দুই মাইল লম্বা ছিল। বর্তমানে আমাদের গ্রাম এখন হাফ-কিলোও নাই।অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার কারণে উক্ত গ্রামের বাকী অংশের সবটুকই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।এছাড়া রাহাতপুর, চরবৈষ্টমী, টেংগুরহাটা ও আশ্রয়ণ প্রকল্প সবই নদীতে চলে গেছে।
তারা আরও জানান,তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়ার পাশে মুজিব কেল্লার একটু ভাটিতে যমুনা নদীতে কাটার লাগানো হয়েছে।এর আগেও এরা এখান থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটেছে। যে কারণে মসজিদ,মাদ্রাসা, স্কূল ও বিভিন্ন প্রতিষ্টানসহ বহু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।এছাড়া কাটার দিয়ে মাটি কাটালে চরের জমিজমা উঠবেনা এবং আমরা চাষাবাদও করতে পারবো না।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন যমুনা নদীতে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়ে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই।এমন কর্মযজ্ঞের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।