আবিদ হাসান
১ লা নভেম্বর ২০২৪ ইং হতে ৩০ জুন ২০২৫ ইং পর্যন্ত (৮ মাস) জাটকা দশ ইঞ্চি বা ২৫সে.মি. ইলিশ আহরণ,পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ হলেও প্রশাসন এবং মৎস্য বিভাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিয়মিত জাটকা আহরণ করছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পদ্মানদীর জেলেরা। অভিযোগ রয়েছে, জাটকা লুটের ব্যাপারে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধির ভাই, আন্ধারমানিক আড়তের কয়েকজন আড়ৎদারসহ গোপনে থাকা কয়েকজন পাতি নেতা। পদ্মানদী থেকে জাটকা আহরনের পর দুই থেকে তিনশত টাকা প্রতিকেজি দরে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে উপজেলার আন্ধারমানিক আড়ৎ,ধুলশুরা আড়ৎ,বাহাদুরপুর আড়ৎসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার মহল্লায়। তাছারা, উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযানের প্রস্ততির পূর্বেই খবর পেয়ে সটকে পরেন এসব জেলেরা।

গত কয়েকদিনে সরেজমিনে, উপজেলার পদ্মানদীর বিভিন্ন পয়েন্টে কারেন্ট জাল, টুনা ব্যার জাল দিয়ে প্রকাশ্যে জাটকা আহরণ যেন হরিলুটের নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। দেখা যায়, উপজেলার কাঞ্চনপুর,লেছড়াগঞ্জ,ধুলশুরা, আজিনগর ইউনিয়নের পদ্মানদীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় শতাধিক জেলে টুনা ব্যার,কারেন্ট জাল দিয়ে প্রকাশ্যে নিয়মিত জাটকা আহরণ করছে গত আড়াইমাস ধরে। প্রশাসনের ঢিলেঢালা অভিযানের কারণে জাটকা লুটের মহোৎসবে মেতেছে উপজেলা এবং জেলার বাইরে থেকে আসা মৎস্য শিকারীরা।
জেলেদের ভাষ্যমতে ছান্দি বড় ধরনের নৌকা দিয়ে টুনা ব্যার নামক জালের দৈর্ঘ প্রায় কয়েক কি.মি. এড়িয়াজুরে হওয়ায় একবার জাল ফেললে ৫ থেকে ৬ মণ করে জাটকা আটক পরে প্রতিবার। প্রতিদিন ২ থেকে তিনবার জাল ফেললে মোট দশ মণ জাটকা আহরণ সম্ভব। মাঝে মাঝে প্রশাসন ও আইনের পরিচয় দিয়েও ২০/৩০ কেজি করে জাটকা নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জাটকা আহরণে ফরিদপুর থেকে আসা জেলে নিমাই জানান, আমরা হাতিঘাটা ধুলশুরা এলাকায় সকাল থেকেই প্রতিদিন প্রায় দুই আড়াইমণ জাটকা মাছ ধরে ধুলশুরা এলাকায় বিক্রি করি। চেয়ারম্যানের ভাই আমাদের দেখেশুনে রাখে। আপনার প্রয়োজন হলে কয়েক কেজি নিতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন জেলে জানান, আমগো কেউ কিছু কয় না। কইলে চেয়ারম্যানের ভাই আছে, নেতা মস্তান আছে। আমরা পদ্মার রাজা। ডেলি আমরা সবাই তাগোরে মাছ দেই, ট্যাহা দেই, আবার বড় সাবরেও নাকি তারা বড় মাছ দেয়। তারা আমগো দেইহা রাহে। ট্যাহা দিলেই সব হালাল।
আন্ধারমানিক আড়তের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আড়ৎদার জানান, বেশিরভাগ জেলে আমগো এলাকার বাইরের। আমগো আড়তের সুবলের নেতৃত্বে ব্যাপারি জেলেকে দিয়ে জাটকা কিনে এবং মাছ মারায়। তাগোর কাছ থেকে জাটকা নিয়া আমগো আড়তেই বেচে, এইডা আমরা সবাই জানি। আমরা মানা করা সত্তেও গত একমাস ধরে চরের জুয়েল নামের ব্যাপারীর কাছ থেকে সুবল নিয়মিত জাটকা কিনে তা অনত্র বিক্রি করছে প্রকাশ্যেই। আইজক্যা সুবলের কাছে জাটকা বিক্রি করার সময় জুয়েল নামের একজনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে। অদৃশ্য বিশেষ সুপারিশে হালকা জরিমানা করে ছেরে দিবে। আমগো আড়ৎদারের আরও কয়েকজন এসব জাটকা লুটের সাথে জরিত বলেও অভিযোগ করেন।
উপজেলা ইলিশ প্রকল্পের ক্ষেত্র-সহকারী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পূর্বেই আমরা কয়েকজনকে নজরে রেখেছি, আজ সকালে একজনকে আন্ধারমানিক আড়ৎ থেকে জাটকাসহ আটক করেছি। আইনগতভাবে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। আমরা নিয়মিত পদ্মায় অভিযান করবো।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ নূরুল হক ইকরামের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও বক্তব্যের জন্য পাওয়া যায়নি।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোহিনুর আক্তার বক্তব্যের জন্য ফোন দিলে তিনি জানান, আমি এখন খাদ্য বান্ধব ডিলারের লটারির জন্য ব্যস্ত আছি। আপনি এখানে চলে আসুন।