পেটে স্থূলতা কী?
দেহের মধ্যভাগে বা পেট ঘিরে চর্বি থাকার পরিমাণকে বলা হয় পেটে স্থূলতা। এটি প্রধানত দুই প্রকার:
- ভিসরাল ফ্যাট: যকৃত, অন্ত্র এবং পেটের ভেতরের অন্যান্য অঙ্গে জমা থাকা চর্বি।
- সাবকিউটেনিয়াস ফ্যাট: ত্বকের নিচে জমা থাকা চর্বি। বেশিরভাগ মানুষের দেহের ৯০ শতাংশ চর্বি ত্বকের নিচেই থাকে।
কীভাবে পরিমাপ করা হয়?
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই নিবাসী চিকিৎসক ও প্রশিক্ষক ড্যানিয়েল হিলড্রেথের মতে, কোমরের মাপ ৩৫ ইঞ্চির ওপরে হলে সাধারণত ধরে নেওয়া হয় ওই ব্যক্তির পেটে অতিরিক্ত চর্বি রয়েছে। তবে এই মাপ ব্যক্তিভেদে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে।
পেটে চর্বি জমার কারণ
নানান কারণে পেটে চর্বি জমতে পারে। প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. খাদ্যাভ্যাস
- প্রক্রিয়াজাত, চর্বি ও চিনি যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া
- অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা
- চিনিযুক্ত পানীয় বেশি পান করা
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ (যা উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত)
- মানসিক চাপ থেকে কমফোর্ট ইটিং (অতিরিক্ত খাওয়া)
‘দ্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ জানায়, স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা কমাতে কৃত্রিম ‘ট্রান্স ফ্যাট’ এড়িয়ে চলা উচিত। মাখন, ক্রিম, পনিরে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, আর ট্রান্স ফ্যাট পাওয়া যায় কেক, পেস্ট্রি এবং ফাস্ট ফুডে।
২. ধূমপান
যদিও ধূমপানের সরাসরি প্রভাব এখনও স্পষ্ট নয়, তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপায়ীদের মধ্যে ভিসরাল ফ্যাটের পরিমাণ বেশি হতে পারে।
৩. অ্যালকোহল গ্রহণ
অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত হওয়ার পাশাপাশি অ্যালকোহল গ্রহণকারীরা অলস হয়ে পড়েন, যার ফলে শারীরিক পরিশ্রম কমে যায় এবং পেটে মেদ জমে।
৪. শরীরচর্চার অভাব
নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব ওজন বৃদ্ধি করে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা’ অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত, যা সপ্তাহে পাঁচ দিন ধরে প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়ামের সমান।
৫. অন্যান্য কারণ
- মানসিক চাপ
- বংশগত কারণ
- পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রম (PCOS) বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা
পেটের স্থূলতা থেকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
পেটের স্থূলতা শরীরের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ
- টাইপ-২ ডায়াবেটিস
- স্মৃতিভ্রংশ রোগ (ডিমেনশিয়া)
- অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট
- স্তন ক্যান্সার
- মলাশয়ের ক্যান্সার
- যকৃতের রোগ (পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণে)
পেটের মেদ কমানোর উপায়
পেটে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি কমাতে কিছু কার্যকর উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে:
- সুষম খাদ্যাভ্যাস: প্রাকৃতিক, অস্বাস্থ্যকর চর্বি ও চিনি কমযুক্ত খাবার গ্রহণ করা।
- নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট শারীরিক কার্যক্রম করা।
- চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমানো: উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা।
- অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার করা: স্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্য এগুলো এড়ানো জরুরি।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: মেডিটেশন, যোগব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো।
পেটের স্থূলতা শুধু শারীরিক সৌন্দর্য নয়, স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণও হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও সুস্থ জীবনযাত্রার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই সুস্থ জীবনযাপনের জন্য এখনই পদক্ষেপ নিন!