ডেস্ক রিপোর্ট
গায়ের রং ও স্বাদে অনন্য এক ফল, বারি টিসা-১, পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈচিত্র্যময় ফলের ভাণ্ডারে নতুন সংযোজন। গাঢ় হলুদ শাঁসযুক্ত এই ফলটি খেতে মনে হয় যেন ডিমের কুসুমের সঙ্গে কেউ ক্রিম ও মধু মিশিয়ে দিয়েছে। মুখে দীর্ঘ সময় স্বাদ লেগে থাকে। আকারে সফেদার মতো হলেও এর স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকদের দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রচেষ্টার ফসল এই টিসা ফল। দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকো থেকে ২০১৯ সালে চারটি জাতের টিসা ফলের চারা এনে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একটি জাত দেখতে ডিমের মতো, অপরটি সফেদার মতো, আর বাকি দুটি কিছুটা লম্বা আকৃতির। ডিমের মতো দেখতে জাতটি একবারে ৪০০-৫০০টি ফল দেয় এবং প্রতিবছর ফলন হয়।
গবেষকদের মতে, পাহাড়ি অঞ্চলের আবহাওয়া, মাটি, তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত টিসা ফল চাষের জন্য উপযোগী। বিশেষ করে নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে অধিক ফলন পাওয়া যায়। একটি পরিপক্ব ফলের ওজন গড়ে ১৭০-১৯৫ গ্রাম হয় এবং প্রতিটি গাছে ৬৫-৭০ কেজি পর্যন্ত ফল ধরে। গাছের বয়স ভেদে ফলনের তারতম্য ঘটে।

টিসা ফলের বংশবিস্তারের জন্য বীজ থেকে চারা উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রাফটিং বা কলমের মাধ্যমেও চারা উৎপাদন করা সম্ভব। এটি ভিটামিন এ, সি এবং ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়ামের মতো খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। ফলে এটি পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষকরা মনে করছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে কৃষকদের হাতে টিসা ফলের চারা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। দক্ষিণ মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার এই স্থানীয় ফলটি বাংলাদেশের বাজারেও জনপ্রিয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ফলটির নতুন জাত উন্নয়নের জন্য এটি অনুমোদনের জন্য বীজ বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান জানান, টিসা ফলের বাজারে প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা বাজারে আসার পর বোঝা যাবে। নতুন ফল হিসেবে এটি মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।