মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৫

ঘোড়ার গাড়ি যমুনার চরাঞ্চলে আজও পণ্য পরিবহনে ভরসা

আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামীণ জীবনের বহু ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামীণ জীবনের বহু ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় গ্রামবাংলার পথে-প্রান্তরে ছুটে চলত ঘোড়ার গাড়ি—যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম ছিল সেটিই। এখন সেই দৃশ্য দেখা যায় কেবলই কিছু দুর্গম চরে, যেখানে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহনের পক্ষে চলাচল সম্ভব নয়।
যমুনার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে আজও ঘোড়ার গাড়িই প্রধান ভরসা মানুষের। উঁচু-নিচু, বালুময় আঁকাবাঁকা পথে যাত্রী বা মালামাল গন্তব্যে পৌঁছে দেয় এই পুরোনো বাহন। বর্ষাকালে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে ঘোড়ার গাড়িই হয়ে ওঠে চরবাসীর জীবনের অংশ। পানি কমে যাওয়া যমুনার বুকজুড়ে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য চর, যার মধ্য দিয়ে চলে এই ঐতিহ্যবাহী বাহনের টগবগ শব্দ।
সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর, চৌহালী, শাহজাদপুর ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলে এখনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। শহর থেকে নৌকায় করে আনা মালামাল ঘোড়ার গাড়িতে তোলা হয়—তারপর শুরু হয় কয়েক কিলোমিটার বালুর রাস্তা পেরোনোর যাত্রা। চরবাসীর কাছে এ যেন শুধু বাহন নয়, জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সত্তর বছর বয়সী ঘোড়ার গাড়িচালক আমিনুল বলেন, আমরা চরের কৃষক মানুষ। বহু বছর ধরেই ঘোড়ার গাড়ি চালাই। ফসল ঘরে তোলা থেকে বাজারে নেওয়া—সবই করি এই গাড়িতে।
মেছড়া গ্রামের হোসেন আলী জানান, ফসল ঘরে তোলা হোক বা হাটে নিয়ে যাওয়া, ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া উপায় নেই।
নদীপারের মুদি দোকানদার জাবেদ আলী বলেন, দোকানের মাল আনতে, আবার ভাড়াও বহন করতে ঘোড়ার গাড়িই ভরসা।
চর সয়াশেখার কৃষক আলম, শাহিন, মোতালেবরা বলেন, বাড়ি থেকে কয়েক মাইল দূরে জমি। ঘোড়ার গাড়ি না পেলে মাথায় বা কাঁধে বোঝা নিয়ে আসতে হয়।
চৌহালীর তেগুরি চরের জহুরুল ইসলাম ও কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়ার বকুল শেখ জানান, তারা প্রায় এক যুগ ধরে ঘোড়ার গাড়ি চালাচ্ছেন। প্রতিদিন আয় হয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, তার মধ্যে ২০০-২৫০ টাকা লাগে ঘোড়ার খাবারে। তবু এই আয়েই চলে তাদের সংসার।
কাওয়াকোলা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান জিয়া মুন্সি বলেন, নদী তীরবর্তী বালুময় রাস্তাগুলোতে চলাচল বা পণ্য পরিবহনের জন্য একমাত্র যানবাহন ঘোড়ার গাড়ি আজও চলছে।
যমুনার চরে সূর্য ডোবে, নৌকার পাল নিস্তব্ধ হয়ে যায়—কিন্তু বালুর রাস্তা ধরে তখনও ছুটে চলে একেকটি ঘোড়ার গাড়ি। আধুনিকতার জোয়ারে যখন গ্রামীণ ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে, তখন এই গাড়িগুলো যেন সময়ের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে যমুনার বুকজুড়ে।

এ বিভাগের আরও সংবাদ

spot_img

সর্বশেষ সংবাদ