মোঃ সজল আলী
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় প্রায় চার কোটি টাকার ব্রিজের দুইটি পিলার আর এপ্রোচ নির্মাণ করেই সোয়া দুই কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়ে পালিয়েছে ঠিকাদার। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্রিজ নির্মাণ নিয়ে নিরাশা কাজ করছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
উপজেলার এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে জিডিপি-৩ এর আওতায় ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৪০ টাকা বরাদ্দে ঢাকা-আরিচা ন্যাশনাল হাইওয়ে বাঠইমুড়ী বাজার ভায়া বানিয়াজুরী ইউপি সড়কের ১৬১০মিঃ চেইনেজে ৫৬ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ কাজ পায় খান এন্টারপ্রাইজ এন্ড মাকসুদ ইঞ্জিনিয়ারিং নামের যৌথ প্রতিষ্ঠান। কাজ আরম্ভের তারিখ ছিলো ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখে আর কাজ শেষ করার তারিখ ছিলো ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ১২ তারিখে। এবং সময় মতো কাজ শেষ করতে না পারায় আরো ৭ মাস সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের মে ২০ তারিখ পর্যন্ত সময় পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে অফিসে কাগজে কলমে অধৈক কাজ শেষ হয়েছে দেখিয়ে ২ কোটি ১৬ লক্ষ ৩৯ হাজার ২৫৬ টাকা উত্তোলন করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
স্থানীয়দের জানায়, গত দেড় বছর ধরে দুইটি পিলার আর দুই পাশের এপ্রোচ নির্মাণ করে ঠিকাদারের লোকজন এলাকা থেকে চলে গেছে আর কখনো আশে নাই । গত পাঁচ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে ব্রিজ নির্মাণ নিয়ে নিরাশা কাজ করছে ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ঘিওর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন ও প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম বানিয়াজুরী ইউনিয়ন পরিষদ সড়কটি। বানিয়াজুরি ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের তারাইল ভাংঙ্গার মধ্যে দুইটি পিলার ও দুই পাশের এপ্রোচ স্থাপন করে রেখেছে প্রায় দেড় বছর যাবত। এমন দূর্দশা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকাবাসীর। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত, কৃষি জমির ফসল পরিবহনসহ ব্যাঘাত ঘটছে দৈনিক কাজের।
পথচারী ইমন বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে আমরা ঘিওর উপজেলায় যাতায়াত করি । এই রাস্তাটাই সহজ রাস্তা। অনেক দিন ধরে এই তাঁরাইল ভাঙ্গায় ব্রিজ হবে শুনতেছি কিন্তু দেড় বছর ধরে পিলার করে লোকজন চলে গেছে কিন্তু আর আশে নাই। আমাদের যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়।”
তাড়াইল গ্রামের কৃষক আরমান মোল্লা বলেন, “আমি এই চকে তিন বিঘা জমিতে সরিষা ও দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এই জায়গা দিয়েই সেইসব ফসল হাটে নেই। এখন পানি নাই যাতায়াত করতে পারি। কিন্তু বর্ষার সময় পানি আসলে হাট বাজার যাওয়া আশা খুব কষ্ট হয়ে যায়। আমাদের এই ব্রিজটা হওয়া খুব দরকার। “
কেল্লাইকাগজর গ্রামের রাসেল বলেন, “এলজিইডি অফিসের গাফিলতি আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতার কারণে আজ ব্রিজটির কাজের এই অবস্থা। এলজিইডি অফিসের কেউ ভুলেও এই তাড়াইল গ্রামের দিকে আশে না। এই ব্রিজটি কাজ অনেক আগেই শেষ হয়ে যেতো যদি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিককে এলজিইডি চাপ দিতেন। এখন শুনতেছি মালিক আওয়ামী লীগের নেতা ছিলো এখন তিনি পালাতক আছে। এই ব্রিজের কাজ আদেও হবে কিনা আল্লাহ মাবুদ জানে।”
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজ এন্ড মাকসুদ ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্বত্বাধিকারী মোঃ মাকসুদ হোসেন আত্মগোপনে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহেনুজ্জামান বলেন, আমি এই ব্রিজের বিলের বিষয়ে কিছু জানি না। আগের ইঞ্জিনিয়ার বিল দিয়ে গেছে।
ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমা সুলতানা নাসরীন বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। সরেজমিন বিষয়টি দেখবো। আমি এই বিষয়টি নিয়ে জেলা অফিসেও কথা বলবো। আর যতো দ্রুত সম্ভব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ব্রিজের কাজটি সম্পন্ন শেষ করাবো।