বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৩, ২০২৫

আমরা কখন আর সচেতন হইব: ডেঙ্গু পরিস্থিতি

সমগ্র দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করিয়াছে; কিন্তু জাতীয় নির্বাচনসহ নানা ইস্যুর কারণে বিষয়টি যেন ধামাচাপা পড়িয়া যাইতেছে। স্থানীয় জনসেবকদের দৃষ্টি এখন এইদিকে নাই বলিলেই চলে। অথচ গতকাল ইত্তেফাকের অনলাইনের খবর হইল, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়িয়া চলিয়াছে। সমগ্র দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হইয়া পাঁচ জনের মৃত্যু হইয়াছে।
একই সময়ে ১ হাজার ৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হইয়াছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম হইতে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হইয়াছে এই তথ্য। ইহা লইয়া চলতি বৎসরে এই যাবৎ ডেঙ্গুতে মোট ৩০৭ জনের মৃত্যু হইল। আর চলতি বৎসরের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হইয়াছে ৭৬ হাজার ২৬ জন। তাহার মধ্যে ৬২ দশমিক তিন শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ নারী।
উল্লেখ্য, গত বুধবারের হিসাব অনুযায়ী এক দিনে ডেঙ্গুতে মারা যায় ১০ জন। চলতি বৎসরে ইহাই এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। ইহার পরও কি আমাদের টনক নড়িবে না? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলিতেছেন, সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়ায় বাড়িতেছে এই মৃত্যুর মিছিল। বিশেষ করিয়া গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র রোগীরা যখন হাসপাতালে আসিতেছে, তখন তাহার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। সমগ্র দেশে সরকারি হাসপাতালসমূহে ডেঙ্গু রোগের টেস্ট বা পরীক্ষা সম্পূর্ণ ফ্রি করা হইয়াছে। ইহা একটি ভালো উদ্যোগ নিঃসন্দেহে; কিন্তু অনেকে ডেঙ্গু জ্বরকে সাধারণ জ্বর মনে করিয়া চিকিৎসা শুরু করিতে দেরি করিতেছে। ফলে বাড়িতেছে জটিলতা ও মৃত্যু। গ্রামাঞ্চলে কমিউনিটি হেলথ সেন্টার থাকিলেও অসতর্কতার কারণে এবং শহরাঞ্চলের অধিকাংশ ওয়ার্ডে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের সুব্যবস্থা না থাকায় হাতের নিকট পরীক্ষা করা সম্ভব হইতেছে না। তাহা ছাড়া ডেঙ্গুতে এইবার অধিকাংশ মৃত্যু হইতেছে শক সিনড্রোমে। যেইখানে রোগীর শরীরে দ্রুত রক্তচাপ ও অণুচক্রিকার পরিমাণ কমিয়া যায়। ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট তথা তরল ব্যবস্থাপনায় তৈরি হয় জটিলতা। ইহাতে পানিশূন্যতা দেখা দেয় এবং রোগী অসচেতন হইয়া পড়িয়া যায়। বর্তমানে শক সিনড্রোম ও হেমোরেজিক ফিভার-এই দুই ধরনের সমস্যা রোগীদের কাহিল করিয়া তুলিতেছে। ডেঙ্গুর ধরনে এই পরিবর্তন ও নূতন উপসর্গের কারণে রোগীরা অনেক সময় কিছু বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছেন না। যখন হাসপাতালে আনা হইতেছে, তখন তাহাদের শরীরের অবস্থা খারাপ। ইহাতে প্রাণহানির আশঙ্কা আরো বাড়িতেছে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলিতে এই বৎসর মশক নিধন কার্যক্রমে শিথিলতা লক্ষ করা গিয়াছে। এই বৎসর বর্ষাকালের পরিধি ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বাড়িয়াছে; কিন্তু সেই অনুযায়ী মশক নিধন কার্যক্রম গতিশীল হইবার কথা থাকিলেও বাস্তবে তাহা পরিলক্ষিত হয় নাই। ইহার বড় কারণ স্থানীয় সরকারে জনবলের অভাব। এখন বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই সমস্যা কীভাবে দ্রুত সামাল দেওয়া যায় তাহা লইয়া কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
আমরা মনে করি, সামনের দিনগুলিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আমাদের আরো ভোগান্তির কারণ হইয়া দাঁড়াইতে পারে। এই জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে অধিক সতর্কতা জারিসহ সাধারণ মানুষের মাঝে এই ব্যাপারে সচেতনতা গড়িয়া তোলা প্রয়োজন। ডেঙ্গু মশা যাহাতে বংশবৃদ্ধি করিতে না পারে, এই জন্য এই সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার কোনো বিকল্প নাই। এই ব্যাপারে প্রত্যেক নাগরিককে আরো সচেতন ও দায়িত্বশীল হইতে হইবে। প্রত্যেক বাসাবাড়িতে মশার বংশবিস্তার রোধ করিতে হইবে। ব্যক্তিগত বাড়ির ছাদ, বারান্দা, রান্নাঘরের নিচে, ফ্রিজের নিচে, ফুলের টবে, দুই বাড়ির মাঝের স্থানে যেইখানে পানি জমে কিন্তু সরকারি কর্মীদের প্রবেশাধিকার নাই, সেইখানে ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করিতে হইবে। ইহার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে লইয়া পাড়া-মহল্লায় স্থানীয় সরকার সমন্বিতভাবে মশক নিধন কার্যক্রমও পরিচালনা করিতে হইবে। এই বৎসর রাজধানী ঢাকার বাহিরে বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে যেইভাবে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হইতেছে তাহা উদ্বেগজনক। তাই এই জাতীয় সসস্যাকে আর অবহেলার চোখে দেখিবার কোনো অবকাশ নাই।

এ বিভাগের আরও সংবাদ

spot_img

সর্বশেষ সংবাদ