মো:নোমান আহম্মেদ
সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। শুধু সংস্কার নিয়ে থাকলে হবে না। সংস্কারের পাশাপাশি অন্য কাজগুলিও একসাথে করতে হবে। সেই সাথে যে যন্ত্রপাতি দিয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফ্যাসিবাদ তৈরি করেছিল সেই যন্ত্রপাতি অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সবার আগে সংষ্কার করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের একযুগ পূর্তি উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন অপ্রয়োজনে গুলি চালাতে না পারে, এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন সময়ে জনতার মিছিল বা সমাবেশে গুলির পরিবর্তে টিয়ার গ্যাস বা লাঠিচার্জ করা যেতে পারে। গত ১৬-১৭ বছরে শেখ হাসিনার সরকারের সময় বিএনপির মিছিল দেখলেই গুলি চালানো হয়েছে, যাতে বহু মানুষ আহত বা নিহত হয়েছেন। তাই নতুন করে পুলিশ বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাহলেই হবে সবচেয়ে বড় সংষ্কার।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, বিগত ১৭ বছরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থাকে। শেখ হাসিনার সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি সংষ্কৃতিতে পরিনত হয়েছিল। তার সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের যেন প্রতিযোগীতা চলেছিল। এমন কোন পরিক্ষা নেই যেখানে প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। দেশের লোক উন্নত হোক বা নৈতিকভাবে গড়ে উঠুক শেখ হাসিনা তা কখনো চাননি।
তিনি বলেন, গত ১৬-১৭টি বছর শেখ হাসিনা দেশে ফেরাউনের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে পুলিশ বাড়ি থেকে মানুষকে ধরে নিয়ে জেলে পাঠাতো। প্রতিবাদ করলেই মামলা, নিপীড়ন আর গুম হতে হতো।
লুটপাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বড় বড় মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে লুটপাট করেছে। তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা ২৮ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
সংষ্কার বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, যারা অন্তবর্তীকালীন সরকার পরিচালনা করছেন, তাদের উচিত এমন সংস্কার করা, যা ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদের পুনঃউত্থান রোধ করবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ, সিন্ডিকেট ভাঙা, এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মানুষ যেন সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য ও বস্ত্র পায়, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশে আর যেন আয়নাঘর তৈরি না হয়। আপনারা এ বিষয়ে এখনো কেন কোন ব্যবস্থা নেননি। আপনারা জুলাই ঘোষণার কথা বলবেন, অনেক সংষ্কারের কথা বলবেন কিন্তু মানুষের পেটে ক্ষুধা থাকবে তখন মানুষ এসব কিছু শুনবে না। আপনাকে বাজার নিয়ন্ত্রন করতে হবে, সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে, অপরাধীদেরকে ধরে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সমাজের মধ্যে একটি স্বস্তি আনতে হবে। মানুষ যাতে মোটা চাল ও মোটা কাপড় পড়ে জীবন ধারণ করতে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি ডা. মো. জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর গোলাম হাফিজ কেনেডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রোবায়েত ফেরদৌস, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খানম রিতা ও সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর।