অভিযোগের পরেও বহাল তবিয়তে ডা:ফজলে বারী

Spread the love

বিশেষ প্রতিবেদক

একাধিক কর্মস্থলে উঠেছে দুর্নীতি ও নারীবাজির অভিযোগ। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ করেছে তদন্ত,তবে নেওয়া হয়নি দৃশ্যমান শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। ফলে একের পর এক লাঘামহীন দুর্নীতির সুযোগ পেয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ডা:ফজলে বারী। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে লুটপাট করেছেন জনস্বার্থে বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা। ডা: ফজলে বারী সম্প্রতি ঢাকার কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দিয়েছেন। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে যোগ দেওয়ার আগে দুর্নীতি ও নারীবাজির অভিযোগে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিজে অব্যাহতি নেন। ছাত্রদের তোপের মুখে সিভিল সার্জনের সামনে তার দোষ স্বীকার করে ওই কর্মস্থল ত্যাগ করেন ডা: ফজলে বারী। এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক দায়িত্বরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও অদৃশ্য কারনে ডা:ফজলে বারীর বিরুদ্ধে কোন তদন্ত হয়নি। শুধু শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই নয়, তার আগের কর্মস্থল পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলাতেও ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে  দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এসব দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হলেও ডা:ফজলে বারীর বিরুদ্ধে কোন দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহন করেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে ডা:ফজলে বারী যে কর্মস্থলেই গেছেন সেখানেই দুর্নীতির আখড়া গড়ে তুলেছেন। ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে লুটপাট করেছেন লাখ লাখ টাকা,জড়িয়েছেন নারী কেলেঙ্কারিতে। তার দুর্নীতির যন্ত্রনাই পিরোজপুরের নাজিরপুরের মানুষ এতোই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলো যে মানিকগঞ্জের শিবালয় কর্মরত থাকালীন সময়ে পদত্যাগ করার খবরে তারা হাসপাতালে মিষ্টি বিতরন করেন।

২০২০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ডা:ফজলে বারী পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন।২০২১ সালের ২২ মে ডা:ফজলে বারীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়। ওই অভিযোগ বলা হয়,ডা:ফজলে বারীর সহায়তায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রায় ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ জমি দখল ও ওই জমিতে থাকা ৪টি রেনট্রি গাছ কেটে নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনের পশ্চিম পাশে অবস্থিত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের জন্য নির্মিত নতুন ভবনের জমি ও ওই জমিতে থাকা ওই গাছ কেটে নেন স্থানীয় প্রভাবশালী ইলিয়াস খান ও তার ভাই এনায়েত হোসেন খান। এছাড়া সরকারি গাড়ি নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার ও এর নির্ধারিত চালকের কাছ থেকে মাসিক ৫-৬ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত চালককে দিয়ে সরকারি গাড়ি চালানোর অভিযোগ হয়। আর সরকারি চালক থাকেন ঢাকায়। হাসপাতালের সংক্রমণ ওয়ার্ডের নতুন কেবিন তৈরি করে ৩ মাস ধরে ওই কেবিন ভাড়ার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া ফার্নিচার কেনার নামে ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ, ময়লা কাপড় ধোলাইয়ের খরচ বাবদ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে  ৩ মাসে প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার টাকা নিলেও এর আগে গত এক বছরে সাড়ে ৬৮ হাজার টাকা খরচ হয়। 

অনুসন্ধান বলছে, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোভিডের (করোনা) টিকার পরিবহণ ও আপ্যায়ন খরচ বাবদ রবাদ্দ পাওয়া ৮ লাখ টাকা তিনি বিভিন্ন ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন। এছাড়া ২০২১ সালের ১২ জুন হাসপাতালের অফিস সহায়ক আসলাম হোসেনকে ৭৩ হাজার টাকার একটি ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে স্বাক্ষর নেন। এমনকি গত ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ঘাস খেতে আসা একটি ছাগল আটকে কর্মচারীদের দিয়ে জবাই করে ভূরিভোজ করেন তিনি। এ ঘটনায় ছাগলটির মালিক স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল লায়েক ফরাজী বাদী হয়ে ওই বছরের ২ ডিসেম্বর পিরোজপুর জেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। ২০২২ সালের ১৯ শে জানুয়ারি ছাগল কান্ডে তাকে বদলি করা হয়।

বর্তমানে ঢাকার ৩১ শয্যা বিশিষ্ট কামরাঙ্গীরচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্ত্ববধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন ডা: ফজলে বারী। এসব অনিয়ম ও দু্র্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানিকগঞ্জের শিবালয়ে সিভিল সার্জনের নির্দেশে পদত্যাগ করেছি, আনিত অভিযোগ সত্য নয়। পিরোজপুরের নাজিরপুরে শত্রুপক্ষ নানা অভিযোগ করেছে, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর ছাগলকান্ডের ঘটনায় বদলি করা হয়নি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক ( সুজন) এর সম্পাদক ড.বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এতো অভিযোগের পরেও তদন্ত না হওয়া,সেই সাথে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন না করা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। এমন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো স্বপ্রনেদিতভাবে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের তদন্ত করা উচিত। তদন্তে অনিয়ম দুর্নীতি প্রমানিত হলে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরন করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ( প্রশাসন) এ বি এম আবু হানিফ বলেন, আমাদের কাছে সিভিল সার্জন যদি অ়ভিযোগগুলো পাঠিয়ে থাকেন তাহলে সেগুলো শৃঙ্খলা বিভাগে পাঠানো হবে। জেলা পর্যায়ে অভিযোগগুলো কি পর্যায়ে আছে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

Scroll to Top